শহিদুল আজম: বহুমাত্রিক প্রতিভা
ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘ ক্যারিয়ার শহিদুল আজমের। লিখেছেন অসংখ্য অনুসন্ধানী রিপোর্ট। ফাঁস করেছেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেক দুর্নীতি । পেয়েছেন পুরস্কার। উদ্ভাবনী শক্তি, নতুন নতুন চিন্তা আর ভিন্নধর্মী উপস্থাপনায় ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।খেলাধুলো নিয়ে লিখেছেন গান । ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের ক্রিকেট সঙ্গীত ‘চার মারো, ছক্কা মারো’র রচয়িতা তিনি। বেশ কটি আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান, মোহামেডান এবং বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের থিম সঙ্গীতও লিখেছেন তিনি। ক্রীড়া বিষয়ক সবচেয়ে বেশি থিম সঙ্গীত রচনার কৃতিত্ব এখন পর্যন্ত তারই। শহিদুল আজমের অনুপ্রেরণায় ক্রীড়া সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন অনেক তরুণ।
তার লেখালেখির শুরু স্কুল জীবনে। ঢাকার ফুটবল দেখতেই একদিন হাজির হন গ্যালারিতে। আর সেখানেই খুঁজে পান শিশু চকলেট বিক্রেতা হেদায়েতকে।তার সঙ্গে হয় নানা কথা। আর এ নিয়েই ফিচার- ‘এক হেদায়েতের কথা’ ১৯৭৯তে ছাপা হয় কিশোর বাংলায়।সেটিই ছিল শহিদুল আজমের শুরু। এরপর উৎসাহ বেড়ে যায় লেখালেখিতে। কিন্ত্ত হঠাৎই কিশোর বাংলা বন্ধ হয়ে গেলে কলমচর্চায ছেদ পড়ে। তখন স্বপ্ন উঁকি দেয় বিজ্ঞানী হবার। কলাগাছের বাকল থেকে সুতা প্রজেক্ট নিয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে হই চই ফেলে দিয়ে জয় করেন জাতীয় পুরস্কার। মাসিক, পাক্ষিক আর সাপ্তাহিক পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা দিয়ে লেখক হওয়ার স্বপ্নকে সামনে এগিয়ে নেন। সাপ্তাহিক লাবনী ছিলো তার এগিয়ে যাওয়ার বড় প্লাটফরম। ঢাকার জনপ্রিয় ফুটবল লীগের একটি সিজন পাস আর প্রতিমাসে স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড আর স্পোর্টস স্টারের বিনিময়ে এক সময় ঢাকার ফুটবল গ্যালারিতে নিয়মিত হয়ে যান তিনি। আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকার জমজমাট ফুটবল লীগে গ্যালারির দর্শকদের জন্যে ‘ হিপ হিপ হুররে’ নামে ট্যাবলয়েড পত্রিকাও প্রকাশ করেন শহিদুল আজম। সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সন্দ্বীপ, ঢাকা, এখনই সময়, এই সময়, পরিবর্তন, নগরী ঢাকা, ক্রীড়াজগত, পূর্বাভাসসহ সে সময়ের আলোচিত সব পত্রিকায় নিয়মিত ক্রীড়াবিষয়ক রিপোর্ট লিখতেন শহিদুল আজম। সাপ্তাহিকের পাঠ চুকিয়ে ১৯৯২তে যোগ দেন আজকের কাগজে। ওই বছরই আবার নাম লেখান বাংলাবাজার পত্রিকায়। এরপর ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দৈনিক মানবজমিনে ।ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও কাজের দক্ষতায় তিনি দৈনিক পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেছেন। এ সব গুরু দায়িত্বে থেকেও তিনি আর্ন্তজাতিক আসর থেকে পাঠকদের জন্যে ক্রীড়াবিষয়ক রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। ১৯৯৪-এর নাইরোবী আইসিসি ট্রফি দিয়ে তার বিদেশ মিশন শুরু ।এরপর দেশের বাইরে কভার করেছেন ৯৫এর কলম্বো সাফ ফুটবল ৯৭-এর কুয়ালা লামপুর আইসিসি ট্রফি, ৯৮-এর কমনওয়েলথ গেমস, ৯৯ ও ২০০৭-এর বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এর বাইরেও সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলন, সৌদি আরবের মক্কায় আইওসি সম্মেলন কভার করেছেন।সারা বিশ্বের বাছাইকরা ২০ জন সাংবাদিকের একজন হয়ে ২০০০ সালে সুইডেনের কালমারে মাসব্যাপী সেমিনারে অংশ নেন। খবর সংগ্রহের জন্যে তিনি তিন ডজনেরও বেশি দেশ ভ্রমন করেছেন। ২০১১ সাল থেকেই আছেন এটিএন নিউজে এডিটর, ইনপুট হিসেবে। ২০০১ সালে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত আইপিএসের কংগ্রেসে তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে কুয়ালা লামপুরে আসপুর একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতেও তিনি সমিতির প্রতিনিধি ছিলেন। তার নেতৃত্বেই প্রকাশিত হয় দেশের প্রথম মিড ডে ডেইলি দিনেরশেষে। এক সময় তিনি দৈনিক মানবজমিন-এ রিভার্স সুইপ নামে প্রতি শনিবার নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখতেন। দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত ক্রীড়া বিষয়ক উপসম্পাদকীয় তিনিই প্রথম লিখেন। ক্রীড়া বিষয়ক সেরা রিপোর্টের জন্যে ডিআরইউ পুরস্কার পান ২০০৩ সালে। তবে সেরা অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্যে তার ঝুলিতে রয়েছে আরও পুরস্কার। এর মধ্যে নারী শিশু নির্যাতন বিরোধী চাঞ্চল্যকর রিপোর্টের জন্যে নুরজাহান স্মৃতি পুরস্কার’৯৫,স্বাস্থ্য এবং শিশু নির্যাতনবিরোধী রিপোর্টের জন্যে দুবার পিআইবি ইউনিসেফ পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির ক্রিকেট সপ্তাহে ঢাকা ছিল মুল ভেন্যু। সে সময় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক সেমিনারে ‘ক্রিকেট এবং দেশপ্রেম’ বিষয়ে মুলপ্রবন্ধ পাঠ করে শহিদুল আজম প্রশংসিত হন এবং বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সম্মান বাড়ান। তিনি এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, দেশ টিভিতে ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। সাধারণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতিতে যুক্ত হলেও পরবর্তীতে সাংগঠনিক, যুগ্ম সম্পাদকের পদ মাড়িয়ে ১৯৯৯-২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। সমিতিকে ডিজিটাইজ করার উদ্যোগও নেন তিনি। তার সময়ের অনেক আয়োজন ব্যাপকভাবে প্রশংসা কুড়ায়। দুটি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় স্যাটায়ার লেখা নিয়ে তার প্রথম বই চিচিং ফাঁক আর ২০০০ সালে ‘ বিজয় পতাকা: কুয়ালালামপুর থেকে ইংল্যান্ড’। ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতোকত্তোর শহিদুল আজমের জন্ম ঢাকায়। তিনি বিবাহিত। স্ত্রী আর পুত্র-কণ্যা নিয়েই তার সংসার। এখনও স্বপ্ন দেখেন একটি ক্রীড়া বিষয়ক দৈনিকের। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।
* বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সম্মাননা অনুষ্ঠানে পঠিত এবং প্রকাশিত।
জহির আব্বাসের সাথে...
- কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান জহির আব্বাস এবং নাসিমুল গনির মাঝে, ১৯৯২ সালে তৎকালীন ঢাকা শেরাটন হোটেলে তোলা এ ...
নূরজাহান স্মৃতি পুরস্কার পেলেন শহিদুল আজম
- সেরা রিপোর্টিংয়ের জন্যে জীবনের প্রথম পুরস্কার অর্জনের পর পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত রিপোর্ট-...
শুভ জন্মদিন শহিদুল আজম
- ২০১৫ জুলাই ৩০ ০৭:০৬:২১ প্রকাশিত দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : এটিএন নিউজের এডিটর, ইনপুট শহিদুল আজমের জন্মদিন ৩০ ...