৩০০ বর কনে একই সময়ে...
শহিদুল আজম, নরসিংদীর নয়াচর থেকে ফিরে: আর মাত্র বাকি ২৪ ঘন্টা। তারপরই বৃহস্পতিবার। ঢাকা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরের নিভৃত গ্রাম নয়াচরে ১শ ৫০ জোড়া নরনারীর জীবনে ঘটবে নতুন সূর্যোদয়। এক সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন ৩শ’ জন বর ও কনে। ‘এজিন’ নেয়া হবে তাদের। বিয়ের রেজিষ্ট্রি খাতায় স্বাক্ষর করে তারা নতুন জীবনের শপথ নেবেন। ইতোমধ্যে প্রস্ত্ততি শুরু হয়ে গেছে এর। নরসিংদি জেলার রায়পুরা থানারছোট এ গ্রামটিতে পড়ে গেছে সাজ সাজ রব। সিরাজনগর উম্মুলকুরা মাদ্রাসা কমিটির দায়িত্বশীলরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন বিয়ের মহাআয়োজনে। আর হবু বররা রিহার্সাল দিচ্ছেন বিয়ের। তারা তালিম নিচ্ছেন নামাজ, কলেমা পড়ার। গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটা। রায়পুরার সৃষ্টিঘর থেকে রাধাগঞ্জ বাজার। কোথাও ইট বিছানো। কোথাও মাটির রাস্তা। তার পাশেই মৃতপ্রায় আড়িয়াল খাঁ। নয়াচর গ্রামের উম্মুলকুরা মাদ্রাসাটি নদীর তীর ঘেঁষেই। সেখানে উচ্চস্বরে কলেমা পড়ছিলেন অর্ধশত ব্যক্তি। মুখে গোঁফ গজায়নি ১২ বছরের বালক থেকে মাথায় শাদা চুলের ৪৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তিও ছিলেন। সবার লক্ষ্য, উদ্দেশ্যই এক। এই মাদ্রাসা আঙ্গিনায় আগামী পরশু তারা বসবেন বিয়ের পিঁড়িতে। মাদ্রাসা কমিটির সেক্রেটারি ডা: ওয়াসিউদ্দিন বললেন, যারা অসচ্ছল, বিয়ে করার সামর্থ্য নেই তাদেরে জনেস্যই এ সম্মিলিত বিযের আয়োজন। শুধু নরসিংদি নয়, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও গাজীপুরের অনেক পাত্রপাত্রী অংশ নেবেন এ বিয়েতে। উম্মুলকুরা মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মুহা: নূরুল ইসলাম এর ব্যবস্থাপক। অর্থ সাহায্য দিচ্ছে মূলত আর্ন্তজাতিক ইসলামী ত্রাণ সংস্থা। ওয়াসিউদ্দিন জানালেন, গ্রামে থাকেন বলে মানুষের অসহায়ত্ব তাদের সব সময়ই চোখে পড়ে।যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় অনেক মেয়ে যৌবণ হারিয়ে বার্ধক্যের কঠিন জীবনে। বিয়ের স্বপ্ন লুপ্ত হয়ে গেছে তাদের। মুলত অসহায় সে মেয়েদের খানিকটা আলো দেবার জন্যে সম্মিলিত এ বিয়ের আয়োজন। সেক্রেটারি আরো জানালেন,১শ ৫০জন বরের প্রত্যেককে ৫হাজার টাকা করে দেয়া হবে। বররা বিয়ের দিনই নগদ মোহর হিসেবে তুলে দিবেন তাদের স্ত্রীদের কাছে। তার ভাষায় মূলত এই ৫ হাজার টাকা যৌতুকেরই স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। তবে বররা আরও পাবে শাদা পাঞ্জাবি, গলার মালা, টুপি ও পাগড়ি। বুধবার রাতেই সব পৌঁছে যাবে তাদের হাতে। বৃহস্পতিবার সকালে তারা মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হবেন শোভাযাত্রা সহকারে। নয়াচর গ্রামে ৪/৫টি তোরণ নির্মাণ করা হবে। সেখানে থাকবে অর্ভ্যথনা কমিটি। তারা শ্লোগান তুলে বরদের অর্ভ্যথনা জানাবেন। দুটি শ্লোগানই থাকবে প্রধানত। এগুলো হলো, ‘হৈ হৈ কান্ড, রৈ রৈ ব্যাপার/ দেড়শ জোড়া বিয়ে হবে গাঙ্গের হেপার’ এবং ‘দেড়শো জোড়া বিয়া/ বর আসবে টুপি মাথায় দিয়া।’ কোন কণে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে আসবেন না। তাদের এজিন নিয়ে আসবেন উকিলরা। মাদ্রাসা.....প্রাঙ্গনে কাজীর খাতায় রেজিষ্ট্রেশন শেষে বররা শ্বশুর বাড়িয়ে গিয়ে কনে উঠিয়ে নেবেন। প্রত্যেক বরের বরযাত্রী হবে সাত সদস্যের। বররা তাদের এলাকার কাজীও নিয়ে আসবেন সাথে করে। ধারণা করা হচ্ছে ৩ হাজার অতিথি আসবেন সম্মিলিত বিয়ের অনুষ্ঠানে। শিক্ষা সচিব ও ইসলামী ত্রান সংস্থার পরিচালকের উপস্থিতি কামনা করছেন তারা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হবে। তারপর হবে আলোচনা অনুষ্ঠান। সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করে মাতিয়ে রাখতে চাইবে বরদের। গতকাল ২১ হাজার টাকায় তিনটি গরু কেনা হয়েছে। আজ কেনা হবে আরও ৭টি। মমতাজ বাবুর্চি বিয়ের রান্না পাকাবেন।
কি করে ১শ ৫০টি জুটি চূড়ান্ত করা হলো?
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুস সালাম আখন্দ বললেন, ৬ মাস আগে থেকে আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা মসজিদের ইমামের কাছে এ সংবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তারপর জুটিগুলোর নাম আসতে থাকে আমাদের কাছে। মুলত পাত্র এবং পাত্রী পছন্দের কাজটি তাদের পরিবারই করেছেন। তারপর আমাদের বিয়ে যাচাই কমিটি প্রতিটি পাত্রপাত্রীর খোঁজ নেয়। প্রত্যেক পাত্র-পাত্রী আলাদা ফরম ফিলাপ করেছে। অনুষঙ্গিত কথাবার্তা সেরেছে। শুধু বিয়ের কাজটি রেখে দিয়েছে মসজিদ কমিটির জন্যে। বিয়ের যাচাই কমিটি ১০/১৫টি ভূয়া পাত্রপাত্রীও খুঁজে পেয়েছে। যাদেরকে তালিকাভূক্ত করা হয়নি। তিনি জানালেন, প্রত্যেক পাত্র এলাকার স্কুলের হেডমাষ্টার এবং মসজিদের ইমামের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। আবদুস সালাম আখন্দ জানালেন, ৯/১০ লাখ টাকা খরচ হবে বিয়েতে। অন্তত ৪০ জন কাজী আসবেন বলে ধারণা করছেন তারা।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি জানালেন, ৩টি ভিডিও ক্যাসেটে এ বিয়ে ধারণ করা হবে। স্থির চিত্র তোলা হবে অসংখ্য। বর ও কনের গায়ে হলুদের ব্যাপারে তারা কিছু করবেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ কিছু করলে তাতে বাধাও দিবেন না। বরদের আগমনের সময় রিলে হবে মাইকে। কোন ব্যন্ড পার্টি অবশ্য বরদাশত করা হবে না। তিনি জানালেন, দাতাদের সহযোগিতা পেলে আগামীতেও এ ধরণের বিয়ে আয়োজনের ইচ্ছে আছে তাদের।কারণ অন্তত ৫শ জুটিকে তারা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। তারা জানালেন, গতকাল সোমবারই বিয়ে হবার কথা ছিল। ঈদের ছুটির কারণে ব্যাঙ্ক, মাদ্রাসা বন্ধ বলে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
‘মৃত’ শিশুটি ১৩ ঘন্টা...
- শিশুটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে ফেলে দেয়া হয়েছিলো বারান্দায় খোলা আকাশের নীচে। বৃষ্টির পানি পড়েছে তার গায়ে। ...