রুবির আদর্শলিপি পাঠ
ট্রিং....টুং... টাং....
বসের রুমের কলিংবেলটি বেজে উঠলেই রুবির বুকে ধরফরানি শুরু হয়। তার চোখ চলে যায় ইদ্রিসের দিকে। ইদ্রিস বসের পিওন। বিশাল একটা ডেস্ক আগলে সারাদিন বসে থাকে। কখনও পত্রিকা পড়ে। কখনওবা চেয়ারে পা উঠিয়ে দিয়ে ঝিমায়। বছরখানেক আগেই তার চাকরি চলে গিয়েছিলো আরও কুড়ি জনের সাথে। অন্য ১৯ জন বাড়ি ফিরে গেলেও ইদ্রিস যায়নি। সে মামলা ঠুকে দেয বসের বিরুদ্ধে। জিতেও আসে মামলায়। জজ রায় দেন, ইদ্রিসের চাকরিচ্যুতি অবৈধ। তাকে চাকির ফেরত দিতে হবে। এ রায়ের পর থেকেই ইদ্রিসের জায়গা হয়েছে এই সদর দরজায়। বে তাকে চাকরি ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ দেননি।
ইদ্রিসের কাজ যথারীতি সকাল বেলা অফিসে আসা। এরপর অফিস টাইমের শেষ পর্যন্ত ঠায় এখানে বসে থাকা। মাঝে মধ্যে বসের রুমেও তাকে যেতে হয়। সেটা খুবই কম সময়; যদি বসের খাস পিয়ন মিলন কোন ফুট ফরমাসে অফিসের বাইরে যায়।
তবে রিসিপশনটা সামলেই কাজ ভুলে না যাবার চেষ্টা করছে ইদ্রিস। চাকরি ফেরত দেবার সময়ই বস বলে দিয়েছিলো, আমাকে চেনো না মনু। বরিশালে বাড়ি আমার। হারামিপনা কতো প্রকার তা শিখিয়ে দেবো হাড়ে হাড়ে। চাকরি ফেরত চাও? নেও। কিন্তু কাম পাইবা না। তোমারে এই খানে বসাইয়া বসাইয়া এমনভাবে আমি অলস বানামু, যে একদিন তুমিই পালাইয়া বাঁচার চেষ্টা করবা।
ইদ্রিসও জানে জলে থেকে কুমিরের সাথে লড়া যায় না। তার চ্যালেঞ্জ ছিলো চাকরি ফিরে পাওয়া। সে পেয়েছে। এখন এখানে সমাদর পাবে না, তার স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে সেটা সে জানে। তাই পুনরায় চাকরি ফেরত পাবার দিন থেকেই ইদ্রিস চাকরি খুঁজছে মনে মনে। চাকরিতো আর মামার বাড়ির মোয়া নয় যে, চাইলেই পাওয়া যাবে। ইদ্রিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যতোদিন এইখানে চাকরি করবে ততোদিন ভাববে এইভাবেই বিশ্রাম করাটাই তার কাজ। ভবিষ্যতে কবে আবার বিশ্রামের সুযোগ হবে কে জানে। এটা চিন্তা না করলে তার ভেতরে হতাশা আসবে। কিন্তু মতিঝিলের অফিস, বিশ্রামের সুযোগ কি আছে। কতো জাতের মানুষ আসে। হিসাব নেই। কতো কিছু জানতে চায়। পাওনাদাররাও আসে। সত্য মিথ্যা বানিয়ে অনেক কথা বলতে হয় তাকে।
ইদ্রিস ভাবতে চায়, বসের শেখানো মিথ্যে বলায় কোন পাপ নেই। এটাও চাকরির একটা অংশ। তবে প্রতিদিন সকালে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার প্রচন্ড বিরক্তিতে কাটে। বিরক্তিটা রুবিকে নিয়ে। কখনও কখনও ভীষণ রাগ হয় ইদ্রিসের। এই রুবিটার যে কবে এখানে আসা বন্ধ হবে।
ঠোঁটে লিপস্টিকের গাঢ়ো প্রলেপ। চুলে বেনী করা। শরীর থেকে বেরোয় পাউডারের উৎকট গন্ধ। পায়ে কম দামী স্যান্ডেল। মানুষের রুচি বলেও একটা কথা আছে। ইদ্রিসের হিসাবে মিলে না এই মাইয়াটার ভেতরে কি পাইছে বস। বাড়িতে এর চেয়ে সুন্দরী, শিক্ষিত বউ আছে। অথচ রুবিরে না পাইলে তার মেজাজটা তিরিক্কি হইয়া যায়। আর অতোই যদি ভালো লাগে তয় বিয়া কইরা ফালাইলেই পারে। প্রতিদিন অফিসের ভেতর এমন ফস্টি নস্টি ভালো লাগে না।
ইদ্রিসের মাথার ওপর দেয়ালে সাটানো বসের কলিং বেলটা বেজে উঠলো। কিছুক্ষণ আগে কি এক নির্দেশ তামিল করতে মিলন নিচে গেছে। ইদ্রিসকেই হাজিরা দিতে হবে। পায়ে স্যান্ডেলটা পরেই ছুটলো সে। ফিরে এলো মিনিটখানেক পর। সোফায় বসা রবি মাথা তুলে তাকালো। এই দৃষ্টি ইদ্রিসের অনেক দিনের চেনা। সে জানে রুবি কি জানতে চায়। তাই মুখটা বাকা করে সে আশ্বস্ত করল.... হ’, তোমার ডাক পড়েছে।
ইদ্রিসের সংকেত পেতে না পেতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো রুবি। হাতের ছোট পার্চটা আরও শক্ত করে ধরলো। দাঁড়িয়ে শাড়ির ভাজগুলো ঠিক করে নিলো। তারপর মাথা নীচু করে হাটা দিলো বসের রুমের দিকে।
বসের রুমে কতোক্ষণ থাকে সে?
হিসাব নেই। একেক দিন একেক সময়। কোন দিন দশ মিনিট। কোনদিন আধাঘণ্টা। কিংবা আরও বেশি।
আইজ কি হইলো? ইদ্রিস আর মিলন মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। মুচকি হাসে। মিলন দেয়ালে ঝুলানো ঘড়িটার দিকে ইঙ্গিত করে। মুখ বাঁকা করেই বলে- এক ঘণ্টা। খাইছে আমারে। অশ্লীল ইঙ্গিত দুজনের। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। রুবি না বেরুলে মিলন আর ইদ্রিসের রেহাই নেই। রুবি যতক্ষণ বসের ওই রমটাতে থাকে, ততক্ষণ চোখে ঘুম নেই এ দু’জনের। হরিণের মতো চোখ কান খোলা রেখে গার্ড দিতে হবে। এই সময়ে বসের রুমে কেউ ঢুকবেনা। এমনকি বসের বাবা এলেও না।
একবার বসের এক স্কুল শিক্ষক কোত্থেকে এসে হাজির হলেন। তাকে তো ঠেকানোই যাবে না কোন মতে। ভদ্রলোক অনঢ়। তার সাফ কথা আমার প্রিয় ছাত্র। পল্টনে হাজার জনতার মাঝে মাথা ঠুকে সালাম করে। আমার নাম শুনলে সে ছুটে আসবেই আসবে।
মিলন আর ইদ্রিসের অবস্থা তখন কে দেখে। মুখ শুকিয়ে চৌকাঠ হলো। তারা বললো, স্যার আজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন। কোনমতেই তিনি আসতে পারবেন না।
কিন্তু শিক্ষকতো নাছোর বান্দা। তিনি মিলন ইদ্রিসের প্রতিরোধ মানবেন না। অনেকটা জোরক করে ঠেলেই চড়াও হলেন বসের দরজায়। ভয়ঙ্করভাবে ধাক্কা মারলেন। এর পরের দৃশ্য দেখে কে। খালি গা, প্যান্টের জিপার লাগাতে লাগতে বস খুললেন দরজা।
স্কুল শিক্ষক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। কোন কথাই বললেন না। দরজার আড়ালে থাকা রুবিও তার দৃষ্টি এড়ালো না। বসও কোন কথা বললেন না। দুজনের নীরবতার মধ্যে দিযে সময় কাটলো কিছুক্ষণ। এর পরই পগার পার হলেন তিনি। আর আসেননি এ পর্যন্ত। না এসে ভালোই করেছেন। সে দিন অফিসের সবার সামনেই বস মিলন আর ইদ্রিসকে ধমক লাগায়Ñহারামজাদা। শুয়োরের বাচ্চা। আগেই বলেছি আমার বাবা এলেও ঢুকতে পারবেনা। আরে ব্যাটা, স্কুল মাস্টার কি বাপের চেয়ে বড়। এরপর এমন ঘটনা যদি কোনদিন ঘটে, কারো রক্ষা নেই। আল্লাহ বাঁচিয়েছে, ওই স্কুল শিক্ষক আর কোনদিন এখানে আসার চিন্তা করেননি।
আইজ হইলোটা কি? মাগীটা বাইর হোক। দেহামু মজাটাÑ রাগে গজরাতে লাগলো মিলন। বসের প্রিয় পাত্র সে। চেহারাটা দারুনমিষ্টি। নিষ্পাপ ভাব। অথচ বসের সব কুকর্মের স্বাক্ষী সে।
একটা অদ্ভুত অফিস বলতে পারেন এইটাকে। শাপলা চত্বরের একটু সামনে যে পেট্রোল পাম্পটা আছে, এরই পাশ ঘেঁষে এ অফিসটার অবস্থান। বসের নামটাও সুন্দর- মুলাজ্জেম। বাড়ি বরিশালে। মুন্সীগঞ্জে একরকে একর জমি আছে। আছে আরো অনেক ফার্ম। কিন্তু এগুলোর কি কাজ জানেনা মিলন। আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর লইয়া কাম কি। মিলন জানেÑ তয় এক সময় এইখানে রমরমা অফিস ছিলো। অনেকগুলো গার্মেন্টসের মেশিন ছিলো। সকাল বেলা কতো মাইয়া আসতো। সুতা কাটতো। কি হইলোÑ দীর্ঘশ্বাস মিলনের। ভোজভাজির মতো সব হাওয়া হইয়া গেলো। বস ওই ব্যবসা গুটাইয়া নিলেন। কতোজন যে চোখের পানি ফেললো। কানলো। বসের পা জড়াইয়া কানলো, স্যার বন্ধ কইরেন না। না খাইয়া মরমু। কে শোনে কথা। মিলন আর ইদ্রিসসহ দুই পিয়ন মমতাজ ম্যাডাম বসের পিএ আর দুইজন অফিসার এইখানে কাজ করেন। প্রতিদিন নীরবে, নিঃশব্দেই কাটে তাদের সময়টা। কেবল রুবিই অফিসটারে গরম কইরা রাখে।
মিলনের চিন্তায় ছেদ পড়লো। বসের রুমের লাল বাতি নিভে গেলো। মিলন, ইদ্রিস দুইজন একসাথেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো। তারা জানে এখন রুবি সবার সামনে দিয়ে গণ বাথরুমটায় ঢুকবে। তার সাথে সাথে মিলনও চাবি নিয়ে এর পাশের বাথরুমটায় তালা খুলে বসের জন্য অপেক্ষা করবে।
এই সময় প্রতিদিনই একবার লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে মিলন। আচ্ছা রুচি বলেওতো মানুষের একটা কথা আছে। একটা অ্যাটাচড বাথরুম বানালে কতো পয়সা খরচ হতো।
নিজের মনেই হাসছে মিলন। আবার বাথরুম? রাস্তার মেয়ে এনে যিনি অফিসের ভেতর দরদাম করেন তিনি আবার বানাইবেন বাথরুম। একদিনের একটা ঘটনা খুব বেশি করে মনে হলো মিলনের।
শীতের এক সন্ধ্যা। পুরো অফিস খালি। হঠাৎ ঝড়ের গতিতে অফিসে ঢুকলেন বস। পেছনে শাড়ি পরা দুই মহিলা। পায়ের স্যান্ডেলগুলোর ফিতাও দুই রকম। একজনের বাঁ পায়ে লাল ফিতাতো ডান পায়ে সবুজ। চেহারায়ও সৌন্দর্যের লেশমাত্র নেই। শরীরে ভয়ানক দুর্গন্ধ।
বস অফিসে ঢুকেই বললেন, মিলন এই দুইটারে একটু ভালো কইরা ওয়াশ করতো। এরপর আমার রুমে পাঠাইয়া দে। এই দিন মিলন বসের রুচির পরিচয় পেয়েছিলো। বসের নির্দেশ পাবার পর থেকে মিলনের হাত পা কাঁপছিলো। জীবনে আর প্রাণপ্রিয় বৌ ছমিরন ছাড়া আর কারো গায়ে হাত দেয়নি।
মিলনের চা বানানো রুমে গোপনে বসে ছিলো বসের ড্রাইভার সামাদ। সে যাত্রায় মিলনকে রক্ষা করেছিলো সে। সামাদ বলেছিলো, রেস্ট নে মিলন। দুইটারে লইয়া আমি বাথরুমে ঢুকি।
মিলনের আরেকটা কথা মনে হলো। আরও বেশি করে হেসে নিলো সে। ওইদিন সামাদ দীর্ঘক্ষণ এগুলোকে ওয়াশ করার পর বসের রুমে পাঠিয়েছিলো। পরে বত্রিশ দাঁত বের করেই সামাদ হেসেছিলো। বলেছিলো, বুঝলিরে মিলইন্যা, রাজা বাদশারা যে কোন খাওন হুট কইরা খায়না। তাগো আগে এগুলো টেস্ট করে ডাক্তাররা। বুঝলি আইজ আমি হইলাম বসের সেই ডাক্তার..... হা: হা:.... হি: হি:....।
সামাদ আয়েশ করে মেয়ে দুটিকে ওয়াশ করে বসের রুমে পাঠিয়েছিলো। তারা বসের রেুমেও ছিলো অনেকক্ষণ। তবে বেরিয়েছে রাগে গজরাতে গজরাতে। দুজনই অফিস ছাড়ার আগে মিলনকে বলে গেছে ওই মিয়া তোমার স্যারে কি অভাবী। আইজ কাইল বাকিতেও....। হুনো, বুধবারে টাকাটা রাখতে কইবা। আমরা লইয়া যামু। নইলে কিন্তু খবর কইরা ছাইড়া দিমু।
না। আজ কেমন যেনো উলোট পালোট মনে হইতাছে। বসের রুম থেকে বেরিয়ে রুবি ঠিকই বাথরুমে গেছে। বস রুম থেকে বেরুননি। বাথরুম সেরে শাড়ির আচলে মুখ মুছতে মুছতেই রুবি বললো, মিলন ভাই, ভালো কইরা এক কাপ চা বানাওতো। গলাটাশুকাইয়া গেছে।
ইস্্, আবার চা। ওই মাইয়া এতোক্ষণ কি করতাছিলি? আমার ক্ষুধাটাই আইজ গেছে গা। শালার চাকরি- মিলন বললো।
রাগ কইরো না। আরে আমি তো তোমাগো স্টাফ হইতাছি। হেরপরতো রেগুলার চা খাওয়াইবা এমনি এমনি। এইবার আমারে একটু চা খাওয়াও না ভাই।
মিলনের রাগ হলো প্রচন্ড। বললো- ঠিক আছে আয়। রুবিকে ডাকলো মিলন। অফিসের ভেতরই একটা ছোট্ট রুমে একটা হিটার লাগানো আছে। সেখানে সারাদিনই লেবু চা গরম হয়। মুয়াজ্জেল এর অফিসে এই একটি মাত্র জিনিস ফ্রি। কষ্ট যা হবার হয় মিলনের। কারন চা টা বানাতে হয় তাকেই। মিলনও সময় ভাগ করে নিয়েছে। সকালে এক পেয়ালা। দুপুরে আর বিকেলে দুবার। রুবির সময়টা অবশ্য স্পেশাল।
কেটলিতে রেডিই ছিল চা। কাপে ঢেলে এর সাথে একটু লেবু মিশিয়ে রুবির হাতে দিলো মিলন। বললো, কতো আইজ এতোক্ষণ কি করতাছিলি? মেজাজটাই একরকম খারাপ হইয়া গেছে।
ওখানে কি করি তুমি বুঝি জানো নাÑ রহস্য করে বললো রুবি। দুইবার শব্দ করে চা ঢাললো মুখে। এরপর মুচকি হেসে বললো, তয় আইজ বস নতুন কথা শোনাইলো।
কি কথা- প্রশ্ন করলো মিলন।
রুবি বললো, স্যার বললেন আমাকে নাকি তিনি ভালোবাইসা ফালাইছেন একদিন না দেখলে তার ভালো লাগে নাÑ এইসব।
তুই কি কইলি?
আমি আর কি কমু।
কইলাম, এই জন্যেইতো আমি প্রতিদিনই আসি। বস কি কইলো জানো?
কি?
কইলো কিন্তু তুই চইলা যাওনের পর আমার মনের ভেতরটা মোচড় দিয়া উঠে। তাই আমি ভাবতাছি এই অফিসে তোরে একটা পারমানেন্ট চাকরি দিমু। আমি কইলাম আমারে আবার কি চাকরি দিবেন। আপনার কি আগের মেশিনগুলো আছে? উনি কইলেন, হেইডা আমি দেখমু। কাইল থেইকা তুই রেগুলার অফিস করবি। হুনছো নাকি, আমি নাকি এইখানে রেগুলার অফিস করমু। আল্লাহরে এতো বড় অফিসে আমি কি কাম করমু?
মিলন বললো, ফাইজলামি ছাড়। আইজ আামর পেটে দুই লাতথি দিলি। বিদায় হয় হারামজাদি। তুই গেলেই আমি খাইতে যামু।
মিলনের কথা শুনলো রুবি। চাটা শেষ করেই বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে বললো, বিশ্বাস করলা নাতো মিলনভাই। আমার চাকরি কিন্তু পারমানেন্ট। কাইল থেইকা তুমি এক কাপ বেশি চা বানাইবা।
এর দশ মিনিট পর মুয়াজ্জেল সাহেবও রুম থেকে বেরুলেন। তার পিএ মমতাজকে বললেন, একটা টেবিল খালি করে রুবির বসার জায়গা করে দিবেন। কাল থেকে সে এখানে অফিস করবে।
এইবার মিলন বুঝতে পারলো, রুবি ঠিকই বলেছে। কিন্তু সে করবেটা কি। নিশ্চয় মমতাজ আপা জানবেন। আগে পেটে কিছুডা দানাপানি পড়–ক। বিকেলের চা দিতে দিতে শোনা যাবে সে কাহিনী।
এ অফিসের শুরু থেকে আছেন মমতাজ। সবাই হাসি তামাশা করেন তাকে নিয়ে। বলেন, সবার চাকরি গেলেও এই মমতাজের চাকরি কোনদিন যাবে না। কারণটা সুবিধার না। সেটা হলো, মমতাজ বসের সব আসল কথাগুলো জানেন। বস চাইবেননা মমতাজ এগুলো প্রকাশের কোন সুযোগ নিক।
তবে বস জানেননা। ফাঁক পেলেই মমতাজ অফিসের সবাইকে নানা কাহিনী বলতে শুরু করেন। আজ যখন বস রুবির জন্যে একটা জায়গা রেডি করার কথা বললেন, তখন থেকে কেনো জানি রাগে গজরাতে শুরু করলেন মমতাজ। বিকেলে চা নিয়ে এই রাগে মিলন কেরোসিন ঢাললো। প্রশ্ন করলো কি কাম করবো রুবি?
মতাজ তাচ্ছিল্য করে বললেন, বুঝলি মিলন বড়লোকের মতিগতির ঠিক নাই। গরীবরা বড়লোক হইতে স্বপ্ন দেখে। আর বড়লোকেরা গরীবের শরীরের স্বাদ লইয়া অন্যরকম তৃপ্তি পায়। আমার বস কি কইছে শুনছোস। বলছে রুবির জন্যে একটা টেবিল ঠিক রাখতে। শোন কথা। রুবির জন্যে আবার টেবিল। আরে ওর জন্যে পালঙ্কের ব্যবস্থা করো। আগেতো সে টুপ কইরা আইসা চইলা যাইতো। কেউ দেখলে দেখছে না দেখলে না। এখানে তাকে চাকরি দিয়ে পুরা অফিসটারে একটা বেশ্যালয় বানানো হচ্ছে। বসরে পস্তাতে হইবে এজন্যে। আমি মমতাজ কইয়া দিলাম।
মিলন শ্রোতার ভূমিকায়। সে কিছু বললোনা। মমতাজ এতে বিরক্ত হলেন। বলেন, কি রে কিছু একটা বল। শোন বস যখন আমাকে রুবির টেবিল এর কথাটা বললো, আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, কি কাম করবো রুবি? এই অফিসে তার সারাক্ষণ বসে থাকা কি ভালো দেখাবে? বস কি বললো জানোস, বললো, কাল অফিসে আসার সময় একটা আদর্শলিপি বই কিনে নিয়ে আসবেন। অফিস টাইমে রুবিকে আপনি সেটা পড়াবেন। এটা এখন থেকে আপনার নতুন ডিউটি। বুঝছোস অবস্থাটা। আমাদের অফিস শেষ পর্যন্ত আদর্শলিপি শেখানোর পাঠশালায় পরিণত হতে চলেছে।
রুবি আগগোড়া কাহিনী জানে মমতাজ। এই বসের কাছে রুবিকে প্রথম মমতাজই নিয়ে এসেছিলেন। মিলনকে সে কাহিনী নিজেই বলেছে রুবি। মিলন মিলাচ্ছে, হায়রে মেয়ে জাতি। একজনের উন্নতি আরেকজন দুই চোখে দেখতে পারেনা।
মিলনকে পছন্দ করে রুবি। পুরুষ হলেও আর দশ জনের মতো তার কুমতলব নেই। রুবি মনে করে একজন অফিস কর্মচারী হিসেবে সে মন যুগিয়ে চলেছে কারো আগেও যায় না পেছনেও না। রুবি তাকে বিশ্বাস করে প্রচন্ড। তাই একদিন আবেগাপ্লুত হয়েই খুলে বলেছিলো জীবনের সব কথা। আজ কেনো জানি মিলনের সে কথাগুলো বেশ মনে হচ্ছিলো। রুবি বলেছিলো, বুঝলা মিলন ভাই, বড় গরীব একটা পরিবারে আমার জন্ম হয়। বাবা রিকশা চালাইতো। আর মায় আমাদের লইয়া থাকতো মুগদাপাড়ার এক বস্তিতে। বাবায় যা আয় করতো তা দিয়া আমদের সংসার ভালোই চলতো। বাবার রিকশায় কোন কোনদিন আমরা ঘুইরা বেড়াইতাম। এই ঢাকা শহর। আহারে কি সুখের দিন ছিলো। একদিন দেখলাম, বাবায় আর আসে না। মায় কানতাছে। কি ব্যাপার? বাবায় আরেকটা বিয়া করছে। পুরুষ মাইনসের এই একটাই রোগ। পকেটে দু একটা কচকচে নোট আইলেই তাদের বিয়া করার খায়েশ হয়। আমার মায় তবু ভালো ব্যবহার করলো। কইলো, আপনি বিয়া করছেন, আপত্তি নাই। বৌ লইয়া আসেন। আমরা সবাই মিইলা মিইশা থাকমু। কিন্তু বাবায় কথা শুনলো না। কইলো, তুই থাক তোর জায়গায়। আমি আর আসমু না। আমারে ভুইলা যা। বাবা চইলা গেলেন। আমরা শুকনায় পইড়া গেলাম। মায় কাজ নিলো মানুষের বাড়িতে। আমারেও পাঠাইলো এই খানে।
সাত বছর আগের কথা। তখন ওইখানে অপিস ছিলো অন্য রকম। অনেক মেশিন ছিলো। আমার কাজ ছিলো সুতা কাটা। মাসে তিনশ টাকা বেতন। ভালোই কাম করতেছিলাম। মাঝে মাঝে ওভারটাইমও পাইতাম। এই মমতাজ ম্যাডাম আছিলেন আমাদের সুপারভাইজার। ম্যাডাম আমারে খুব আদর করতেন। প্রতিদিনই তার টিফিন ক্যারিয়ারের খাওয়া খাওয়াইতেন। আমি তাকে খুব বিশ্বাস করতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন, রুবি আমি তোকে যা বলবো তুই কি তা করবি?
আমি বললাম করমুনা কেন মমতাজ আপা। আপনে আমারে এতো ভালাবাসেন।
ম্যাডাম তখন কইলেন তাইলে কাইল তুই আমার সাথে থাকবি। সরল মনে আমি রাজি হইলাম।
সবাই যখন অফিস থেইকা বাড়িতে চইলা গেলো, মমতাজ ম্যাডাম আমারে নিয়া গেলেন স্যারের রুমে। আমারে দেইখা স্যার যে কি খুশি। বললো, সাবাস মমতাজ। আমি জানতাম তুমি পারবা। আমি তো তখনও ভাবতে পারি নাই আসলে কি হইতাছে। মমতাজ ম্যাডাম আমারে রাইখ্যা পাশের রুমে গেলেন। স্যার উঠলেন চেয়ার থেইকা। বললেন, কিরে তিনশ টাকায় কি তোর মাস চলে? লক্ষ্মী মাইয়া, আমার কাছে আসবি। আদরও দিমু, টাকাও দিমু। কথা শেষ না কইরা তিনি একটানে আমারে বুকে জড়াইয়া ধরলেন। আমি প্রতিবাদ করতে পারলাম না। আমার শরীরে খালি থর থর কইরা কাপতেছিলো। আসলে তখনও আমি বুঝতে পারি নাই কি হইতাছে। স্যার ভাবলো উল্টা। বললো তুইতো খুব সাহসী। কারো সাথে তোর সম্পর্ক টম্পর্ক হইছিলো নাকি। গরীব মানুষ বিশ্বাস তো নাই। এইখানে আসার আগেই আবার নস্টা হইয়া যাস নাই তো।
আমি মাথা নারলাম।
স্যার আমারে তার শরীরের লগে ঠাইসা ধরলেন। স্যারে আমারে আলগাইয়া লইয়া গেলেন ভেতরের ওই রুমটায়। কি তাজ্জব। এই দিনের আগে আমি জানতাম, এইখানে স্যারের রুম একটাই। কিন্তু এর ভেতরে আছে আরেকটা। ওই রুমটার সাজগোছও ছিলো আলাদা। লম্বা একটা চেয়ার ছিলো। জীবনে এমন চেয়ার আর কখনোই দেখিনাই। স্যার আমারে বালুর বস্তার মতো ওই চেয়ারে নিয়া ফালাইলেন। আমি তো তখন কাপতাছি ভয়ে। আমার গালে টান দিয়ে স্যার বললেন, কি মনু ভয় পাইতাছো? ভয়ের কিছু নাই। তিনি আমাকে আরও কাছে টানলেন। তার গরম শাস প্রশ্বাসে আমার মাথা ঝিম ঝিম কইরা উঠলো।
এতোক্ষণ ধৈর্য্য দিয়ে শুনছিলো মিলন। এইবার কথা বললো, থামতো। বাকি আর কইতে হইবো না।
কিন্তু রুবি যেন থামতে চায় না। সে আগের মতোই বলতে থাকে এতো ভালো মানুষ সাইজোনা। তোমাগো পুরুষগো আমি চিনি। পকেটে দুইটা পয়সা পাইলে মাথা ঠিক থাকে না। তুমার তো পয়সা নাই মিলন ভাই, পয়সা হইলে আমার এই কথাগুলোও তোমার খুউব ভালো লাগতো।
ধমক দিলো মিলন, চুপ!! মুখ সামলাইয়া কথা ক। বেশি ভালো হইবো না কিন্তু বললাম।
রুবি বললো, মাইন্ড কইরোনা মিলন ভাই। তুমারে আমার খুউব ভাল লাগে। আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি পয়সা হইলেও তুমি খারাপ হইতে পারবানা।
খালি দেইখাই যাইবা, হ’....
আবারও.....ধমক লাগায় মিলন।
রুবি বললো, আরে আমি কি সব কথা তুমারে বলবো। আমার একটা ইজ্জত আছে না...। স্যারের ওই লম্বা চেয়ারে আধা ঘণ্টার মতো আছিলাম। স্যার তার খায়েশ মিটাইলেন। আমি প্রতিবাদ করলাম না। জানতাম কইরাও কোন লাভ হইবো না। কাপতে কাপতেই শুধু কইলাম- স্যার এইডা কি করলেন?
স্যার আমারে তার বুকে আরও জোরে চাপ দিয়া ধরলেন। আমার দম বন্ধ হইয়া যাওনের দশা হইলো। জোরে হাসি দিয়া বললেন, তোর বেতন বাড়াইয়া দিলাম। এখন থেইকা তোর যহন টাকা দরকার হবে, মততাজ ম্যাডামের কাছে চাবি। অফিস থেকে নিবি তিনশ’ টাকা। বাকিটা মমতাজ তোর কাছে পৌঁছাইয়া দিবে। তুই খালি সময় সময় আসবি। কি ঠিক আছে?
আমি হ্যাঁ বা না কিছুই বললাম না।
স্যার সোজা দাড়াইলেন, গায়ে গেঞ্জি পরলেন। আমি বললাম, স্যার কেউ জানবো না তো।
তুইতো দেখোস নাই। আমিও না হেঃ হেঃ.... স্যার বললেন।
আমি বোকার মতোই কইলাম, মমতাজ ম্যাডাম কইয়া দিবো নাতো? এইবার স্যার ডাকলেন, মমতাজ, মমতাজ....।
বাইরের দরজা খোলার আওয়াজ হইলো। মমতাজ ঢুকলেন। চেহারায় ঘুম ঘমু ভাব। মনে হয় এতক্ষণ তিনি ঝিমাইতেছিলেন। তাকে দেইখা আমি ফ্রকটা হাতে নিলাম।
মমতাজ ম্যাডাম বললেন, শরম পাওয়ার দরকার নাই। আমিওতো তোরই মতো মাইয়া। হেরপর তাকাইলেন স্যারের দিকে। বললেন, স্যার আপনে খুশি তো।
স্যার বললেন, খু-উ-ব। রুবি খুব ভালো মেয়ে। এখন থেকে তার সব কিছু তুমি দেখবা।
এই প্রথম শুনলাম বস মমতাজ ম্যাডামকে তুমিও বলেন। স্যার বললেন মমতাজ ওরে আজ তোমার বাসায় নিয়া যাও। বড়িটাও খাওয়াই দিয়ো। মমতাজ ম্যাডাম বললেন, চল রুবি বাড়ি যাই।
আমি শান্ত সুবোধের মতো ম্যাডামের পেছনে পেছনে রওনা হইলাম।
শ্যামলীর আদাবরে বাড়ি ম্যাডামের। চার তলার তিন তলায় থাকেন। বুড়া বাপের জন্য একটা রুম। মমতাজ ম্যাডাম থাকেন আরেকটা রুমে। রান্ধনের ঘরে থাকে একটা কাজের বুয়া।
মমতাজ ম্যাডাম বলেন, রুবি তাড়াতাড়ি খাইয়া রেস্ট নে। আইজ তুই আমার বিছানায় ঘুমাবি।
আমার তো টাসকি খাওয়ার দশা। হায় আল্লাহ আইজ থেইকাই কি সব পরিবর্তন হইতে শুরু করছে। আমি কইলাম আমার ক্ষুধা নাই। পারলে একটু শোয়ার ব্যবস্থা কইরা দেন।
মমতাজ ম্যাডাম নিজের হাতে বিছানা কইরা দিলেন। বললেন, ঠিক আছে শুইয়া রেস্ট নে। পরে না হয় খাওন যাইবো। হাত মুখ ধুইয়া আমি বিছানায় গেলাম। মমতাজ ম্যাডাম আমার পাশে আইসা বসলেন। মাথায় বুলাইলেন। বললেন, রুবি আমার ওপর রাগ করিস না। আইজ তোর মনের অবস্থা কি এইটা আমি বুঝি। একদিন তোর মতো অবস্থা আমারও হইছিলো। আমি তোর সাথে আছি। ওইদিন কেউ আছিলো না। আমি কাঁদছিলাম। আমি ওই চেয়ারায় যে কতোবার শুইছি হিসাব নাই। এখন দেখ আমার কিন্তু কোন দুঃখ নাই। আমি কতো ভালো আছ্।ি আমার কথা শুনলে তুইও ভালো থাকবি। ধইরা নে এইটাও তোর একটা চাকরি। মাসে তিনশ’ টাকা তোর বেতন। এইজন্যে কতো কস্ট তোকে করতে হয়। কি হয়না? কিন্তু এই কামে তোর কোন কস্ট নাই। মজা আছে। টাকাও তুই বেশি পাবি। তোর চাকরিও যাইবো না কোনদিন।
এইবার আমার চোখ দিয়া পানি বাইর হইতে শুরু করলো। মমতাজ ম্যাডাম বললেন কান্দিস না রুবি। একবার ভাবতো তোর মায়ের কথা। তোর মায়ের কি কোন দোষ ছিলো? তোর বাবার যখন পয়সা হইলো, আরেক মাইয়া বিয়া কইরা পালাইলো। কোন পুরুষদের বিশ্বাস করবি না। তাগোর প্রত্যেকের চেহারা এক। পকেটে টাকা আসলে আর হুশ গুন থাকেনা। আমার চেহারা খারাপ তুই বল। এক পোলারে ৫ বছর ভালোবাসছি। হের পরও দেখলাম তার চরিত্র ঠিক নাই। সিদ্ধান্ত নিলাম, জীবনে বিয়াই করবোনা। বল খারাপ আছি? নিজে কামাই, নিজে খাই। কারো ধারও ধারিনা। পুরষরা যদি পারে আমরাও পারমুনা কেন। আপোসে তুই যদি কারো সাথে বিছানায় যাস, তাইলে পাবি টাকা। সুযোগ সুবিধা। তোরেও ভয় পাইবো ওই ব্যাটা। আর ভালো থাকতে চাইলে সব হারাবি। দেখবি তোরেই চরিত্রহীন বানাইয়া দিছে। এখন তোর খারাপ লাগলেও একদিন তুই আমার কথা মনে রাখবি।
ওই রাতে আমি খাই নাই। খালি কানছি। পরের দিন অফিসে আসি নাই। কেউ আমার খোজ খবরও নেয নাই। একদিনেই বুঝছি আমার জীবনের আসলে কোন দাম নাই। যেই জীবনের দাম নাই, সেইটা নিয়া চিন্তা কইরা লাভ কি। লজ্জার মাথা খাইয়া আমি আবার অফিসে আইছি। ম্যাডামরে বলছি, আপনি যা বলবেন তাই করবো। কিন্তু আমারে টাকা দিতে হইবে। আমার অনেক টাকা দরকার।
মমতাজ ম্যাডাম ভীষণ খুশি হন। বলেন, ঘাবরাইস না। আমি তোর সাথে আছি।
এর তিন দিন পর আবার বসের রুমে আমার ডাক পড়ে। সেই দিন আমি একাই যাই। আস্তে আস্তে ভয় লজ্জা কাইটা যায়। পুরা অফিস জাইনা ফেলে বিষয়টা। এখন আমার কোন লজ্জা নাই। আমি সবার সামনে দিয়া হন হন কইরা বসের রুমে যাইতে পারি। সব কিছু করতে পারি। তোমরা সবাই বুঝো কিন্তু কিছু বলতে পারো না- হেঃহেঃ।
শেষ কথাগুলো যখন বলছিলো রুবি, তার চোখ ছলছল করছিলো। মিলনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলো।
রুবির আবার চাকরি ফেরত পাবার খবরে সেই দিনের কথাগুলো বার বার মনে হচ্ছিলো মিলনের।
পরের ঘটনা
রুবির জন্যে ঠিকই একটি টেবিল চেয়ার এর ব্যবস্থা করতে পারলেন মমতাজ। বসের রুমের খুব কাছেই। বিশাল টেবিল। ড্রয়ার আছে তিনটা। ব্যস্ত মতিঝিলে প্রতিদিন সকালে হাজারো মানুষের ¯্রােতে ভাসতে ভাসতেই রুবি অফিসে আসে। মানুষ জিজ্ঞাসা করলে গর্ব করেই অফিসের নামটা উচ্চারণ করে। কেউ কেউ জানতে চায় তোমার পোস্টটা কি। রুবি বলে- স্টাফ। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বস অফিসে ঢুকেন। সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দেন। রুবিও দাঁড়ায়। কপালে হাত ঠেকায়। প্রতিদিনই এ সময়টা তার ভীষণ হাসি পায়। কারণ কিছুক্ষণ পর বসকে যেভাবে সে দেখবে এটা দেখতে পারবেনা অফিসের আর কেউ। অফিসে সারাদিন রুবির একটাই কাজ বসের ডাকের জন্যে অপেক্ষা। অফিসের অন্যরা যখন দৈনিক পত্রিকা নিয়ে নড়াচাড়া কওে, রুবি তখন উল্টায় তাকে কিনে দেয়া আদর্শলিপি বই। এটি পড়ার কোন আগ্রহ নেই তার। কোন দিন সকাল বেলাই ডাক আসে বসের রুমে। কোন দিন, সপ্তাহেও আসে না। সে সময় রবির বেশ খারাপ লাগে। সে বুঝতে পারে বসের মন ভালো নেই। সকাল বেলায় সবার সাথে সাথে রুবিকেও চা দিয়ে যায় মিলন। রসিকতা করে- পর জনমে যেন তোর ভাগ্য লইয়া জন্মাইতে পারি। দেখ আমার কি অবস্থা, এখন তোরেও চা খাওয়াইতে হইতাছে। রুবির টেবিলের সামনে মাঝে মাঝেই আসেন মমতাজ ম্যাডাম। বলেন, কিরে রুবি তোর আদর্শ লিপি বইটা কই? এতদিনে একটা পাতাও শেষ করতে পারলি না। রুবি বড় চেয়ারটাতে শরীর এলিয়ে দেয়। জবাব তার ঠোঁটের গোড়ায়Ñ কি হইবো আপা আদর্শলিপি পইড়া? আমি তো আর বড় বড় পাশ দিমুনা। মাইনসে আদর্শলিপি পইড়া এরপর চাকরি করে। আর আমি চাকরি পাইয়া আদর্শলিপি পড়তাছি। আপাগো, আদর্শলিপি বইটা পুরা পইড়া ফ্যালাইলে এইখানে আর আমার চাকরি থাকবো না। আদর্শলিপি পড়ার জন্যেইতো আমার চাকরি হইছে। আমি আদর্শ লিপি পড়া শেষ করতে পারবো নাÑসুরে সুরে বলে রুবি।
মমতাজ ম্যাডামও এরপর কিছু বলেন না। শুধু তাকিয়ে থাকেন রুবির দিকে। সেই ফ্রক পরা মেয়েটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। এই জগত সংসারে বেঁচে থাকার সাহস সে সঞ্চয় করেছে।
সচিত্রকরণ : সুমন রহমান।
ভালবাসার ক্রাচ
- অ্যাই শুনছিস!হু।হু না। সিরিয়াসলি....।তোর কোন্্ কথাটি আমি সিরিয়াসভাবে শুনি না বল মিথিলা।তুই তো আমারজান।ফাজলামি রাখ। আমি ...
লক্ষ্মী কোথায়
- এক্সিউজ মি...পথ আগলে দাড়ালো মেয়েটি। ভীষন অবাক শিশির। চোখে ভুল দেখছে না’ তো। অবাক হওয়ার পালা- ...