জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কি সিটি করপোরেশনের এক্সটেনশন?
খেলাধুলোয় যখন কোন সাফল্য নেই, নেই দর্শক কিংবা কোন উন্মাদনা-তখন খেলাধুলোর অবকাঠামোগুলো অলসভাবে ফেলে রাখার কি অর্থ থাকতে পারে! আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিই বা থাকে কি করে। এ আশঙ্কা ওই দুশ্চিন্তায় কিনা তা অবশ্য অপ্রকাশ্য, তবে মুক্ত বাণিজ্যের এ যুগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা ক্রীড়া অবকাঠামোগুলোকে অবাধে বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাধ্যমে আয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। ক’দিন আগে হকি স্টেডিয়ামের দুটি টয়লেট বন্ধ করে দিয়ে তারা দোকান বানিয়েছে। মিরপুর স্টেডিয়ামেও এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। চারদিকের বাধায় উদ্যোগ সফল হয় নি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের কোন টয়লেট মুক্ত আছে কিনা এ নিয়ে যখন সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তখনই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্মকর্তারা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন, দেশের সবচেয়ে কম দর্শক ধারণ ক্ষমতার যে চতুর্থ জাতীয় স্টেডিয়ামটি উদ্বোধনের জন্যে তৈরি করা হয়েছে, এতে তিনশ’ দোকান থাকবে। এই প্রথম কর্মকর্তারা এর সাহসিকতার সাথে এর উদ্দেশ্যও বয়ান করেছেন। বলেছেন, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। বলা আবশ্যক, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের উপস্থিতিতেই তারা এ বয়ান করেছেন। আর এতেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন সচেতন ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়ামোদীরা। বিশ্বের কোন বড় স্টেডিয়ামে দোকান নেই বলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের প্রশ্ন আছে বটে। এর চেয়েও বিস্ময় হলো- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কি শেষ পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের কোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অথবা এর এক্সটেনশনে পরিণত হলো?
কারণ সাধারণত দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ, অবকাঠামো তৈরির দায়িত্বটা সিটি করপোরেশনেরই। ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার কর্তৃপক্ষও তারাই। কাগজে-কলমে এখনও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সিটি করপোরেশনের মতো ভূমিকা রাখার কোন স্বীকৃতি পায়নি। জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত এ সংস্থার মূল কাজ খেলাধুলোর সহায়তা দান করা। এ অর্থে এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা কেন বাণিজ্য সম্প্রসারণে অতি মাত্রায় আগ্রহী হয়ে উঠলো- এ প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না। ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল। তাকেই হয়তো কৌতূহলীরা এ প্রশ্নটি করতেন। কিন্তু সেটাও সম্ভব হচ্ছে না ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীরই এক বক্তব্যের কারণে। তিনিও উচ্চারণ করেছেন একটি সত্য ভাষণ। বলেছেন, আসলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চেয়ারম্যানই সব। তার পরিকল্পনা, অনুমোদন নিয়েই হয় সব কিছু। এর মমার্থটা হতে পারে- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সবকিছুই হয় এর চেয়ারম্যান অর্থ্যাৎ ক্রীড়ামন্ত্রীর জ্ঞাতসারে। এর মানেটা দাঁড়ায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোন দুর্নীতি, অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটাও হয় চেয়ারম্যানের জ্ঞাতসারে। আরও পরিষ্কার করলে দাঁড়ায় অতীত কিংবা বর্তমান সময়ের ক্রীড়া পরিষদের যাবতীয় অনিয়মের জন্যে শুধুই এর চেয়ারম্যান দায়ী। এ বিশ্লেষণ যাদের মাথায়, তারা নিশ্চিত কমলাপুর স্টেডিয়ামে তিনশ’ দোকান ঘর বানানোর চিন্তাটাও ক্রীড়ামন্ত্রীর। কাজেই তিনি যদি ক্রীড়াঙ্গনে অবাধে বাণিজ্যের সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে চান, এতে বাণিজ্যমন্ত্রী কিংবা সিটি করপোরেশন ছাড়া আর কারও তো ঈর্ষান্বিত হওয়ার কারণ থাকতে পারে না। তবে ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই যারা জনাব ফজলুর রহমান পটলকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের অবশ্য খানিকটা বিভ্রান্ত্রি আছে ক্রীড়ামন্ত্রীর এ পরিবর্তন নিয়ে । কারণ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দোকানপাট আর নোংরা পরিবেশ দেখে শুরুর দিকে তিনি শুধু আহতই হননি, প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও হয়েছিলেন। একটি ঘটনা তো ক্রীড়াঙ্গনে উদাহরণই হয়ে আছে। সেটা চার দলীয় জোট সরকার গঠনের খুবই অল্প দিনের মধ্যেকার ঘটনা। তখন ছিল রোজার মাস। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল ঢাকা স্টেডিয়াম সংলগ্ন সুইমিং পুলে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সুইমিং পুল হলেও এটি সে সময় ছিল চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু মোশাররফ হোসেনের জিম্মায়। তিনি লিজ নিয়ে এখানে সাঁতার বাণিজ্য চালাচ্ছিলেন। সুইমিং পুলের খোলামেলা চমৎকার পরিবেশে ক্রীড়া লেখক সমিতির ইফতার পার্টিটি অতিথিদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল যথেষ্ট। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল। কিন্তু তিনি সুইমিং পুলে পা দিয়েই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ডাকেন সাঁতারু মোশাররফ হোসেনকে। সবার সামনেই তাকে ভর্ৎসনা করেন পরিবেশ-এর জন্যে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে বাণিজ্য করার প্রতিষ্ঠান নয় এ শব্দও উচ্চারণ করেন। বলেন, প্রয়োজনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ সুইমিং পুলের লিজ বাতিল করবে। দরকার হলে সাবসিডি দেবে সাধারণ মানুষের সাঁতার শেখার জন্যে। কিন্তু বাণিজ্যের নামে সাঁতারের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবো না। অথচ এই ক্রীড়ামন্ত্রীর সামনেই কমলাপুর স্টেডিয়ামে তিনশ’ দোকানের ঘোষণা আসবে- এটা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। যারা মেনে নিতে পারছেন না তারা বলছেন, এ কথা সত্যি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে রাজনৈতিক নিয়োগ আছে। কিন্তু যারা এখানে আসেন তারা খেলাধুলো অনভিজ্ঞ এটা ভাবা যায় না। যদি ধরেও নেয়া হয়, অনভিজ্ঞ হিসেবেও কেউ কেউ আসেন। কিন্তু বেশিদিন তাদের অনভিজ্ঞ থাকার সুযোগ নেই।
ক্রীড়াঙ্গনের নিয়ন্ত্রক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ভাগ্য খুবই সুপ্রসন্ন। অতীতে অনেকে স্বামী, সন্তানও পাঠিয়েছেন। ঢাকায় ষষ্ঠ সাফ গেমস অনুষ্ঠানের আগে বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হয় সরকারি খরচে। এগুলো কেমন হবে- এ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্যেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনেক কর্মকর্তা বিদেশ সফর করতে গিয়েছিলেন। কাজেই অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা অনভিজ্ঞের মতো কাজ করবেন এটা অনেকেই মানতে পারছেন না। একজন ক্রীড়া সংগঠক বললেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আর যাই হোক অভাবী কোন প্রতিষ্ঠান নয়। গেলো কমনওয়েলথ গেমসের সময় খেলোয়াড়, কর্মকর্তা না হওয়া সত্ত্বেও অনেককে ম্যানচেস্টার যাওয়ার বিমান টিকিট দিয়েছিল তারা। তাছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ইদানীংকালে অর্থ বরাদ্দের জন্যে আবেদন করে কেউ না শব্দ শুনেছেন এটাও অবিশ্বাস্য। ক্রীড়ামন্ত্রী তো ভীষণ উদার। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের যে কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াতই কবুল করেন। আর যে কোন অনুষ্ঠানে চাইলেই তিনি অনুদান দেন। এ অবস্থায় কেবল অর্থ আয়ের জন্যে কমলাপুর স্টেডিয়ামে তিনশ’ দোকান করা হয়েছে এটা অনেকের পক্ষেই মানা সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে কেন?
একজন ক্রীড়া সংগঠক বললেন, হতে পারে সেটা অভিমানে।
কিসের অভিমান? কার কারণে?
ওই ক্রীড়া সংগঠকই ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে- ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবকদের মনে কোনও সুখ নেই। তারা কোনও কিছুই তাদের ইচ্ছেমতো করতে পারছেন না। ধরুন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-এর কমিটি পরিবর্তনের কথাই। কি হলো পরের ঘটনা? আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা বাংলাদেশের ফুটবলই নিষিদ্ধ করে দিল। ভাগ্যিস, সাবেক ফুটবলার, এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের এক সময়কার কর্মকর্তা মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন ছিলেন। তিনিই তার দুতিয়ালির মাধ্যমে ফুটবলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভূমিকা নেন। বাফুফে’র পচা শামুকে পা কাটার পর নিজেদের ইচ্ছেমতো ফেডারেশন সাজানোর পরিকল্পনার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। এর পর আসে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। অভিষেক বিশ্বকাপে যেখানে বাংলাদেশ দু’দুটি ম্যাচে জিতেছে, সেখানে এবার কিছু একটা তারা করে ফেলবেই আর তা দিয়েই ফুটবলের শোক ভুলতে চেয়েছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবকরা। বিশেষ করে কানাডার মতো অখ্যাত দলকে বাংলাদেশ হারাবে এমনটিই ভেবেছিলেন তারা। এবারও কপাল পুড়লো। বাংলাদেশ শুধু হারলো বা ব্যর্থই হলো না হলো সমালোচনার খোরাক। ক্রীড়ার অভিভাবকরা মনের ক্ষোভ জমা রাখতে পারলেন না। বলে দিলেন, দায়ী খেলোয়াড়দের কমিটমেন্ট। এমনও অভিযোগ উঠলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিলো এতে কর্মকর্তাদের মুখই লাল। তাদের কমিটমেন্টই প্রশ্নের কাঠগড়ায়। হকির তো কোনও খবরই নেই। অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার গুরুত্ব হারিয়েছে। সম্ভাবনাময় শুটিংয়েও অধোগতি। ক্রীড়াঙ্গনের কোথাও কোনও সুসংবাদ নেই। এ অবস্থায় প্রায় ৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কেবল জনগণের ট্যাক্সের পয়সা হজম করে কি করে? তাই সবচেয়ে ছোট স্টেডিয়ামে তিনশ’ দোকান তৈরি করে তারা সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছেন। তবে এমন সময় এ ঘোষণাটি তারা দিয়েছেন যখন মাত্র ঢাকা সিটি করপোরেশন বাজেট ঘোষণা করেছে। সেখানে এক সময়ের ক্রীড়ামন্ত্রী বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বেশ দুঃখের সাথেই বলেছেন, সিটি করপোরেশনের আয় দিয়ে আর ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে না। আগামী বাজেটে আয় বাড়াতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের কথাও বলা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তিনশ’ দোকান নির্মাণের এ ঘোষণাা নগরের অভিভাবকদের বেশ উৎসাহিত করবে। কারণ খেলাধুলোর যাই হোক না কেন- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দোকান থেকে সিটি করপোরেশনের তহবিলেও যাবে অনেক অর্থ। একজন সংগঠক বললেন, এ দেশে আসলে যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না। যার যেখানে থাকার কথা তাকে সেখানে নিয়োগও দেয়া হয় না। মার্কেট আর দোকান নির্মাণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তারা অনেক মার্কেট জমাতে পারছে না। অনেক মার্কেটের নির্মাণও শেষ করতে পারছে না। অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা পরিকল্পনায় না থাকলেও কত সহজে দোকান বানিয়েই শুধু ফেলছে না। বরাদ্দও দিতে পারছে। তাদের কাছে দোকান মালিকদের এতো চাহিদা যে স্টেডিয়ামের টয়লেটগুলোকে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দোকান অভিজ্ঞ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের সিটি করপোরেশনে বদলি করা যায় কিনা এটা ভাবার তাগিদ দিয়েছেন অনেকে। তাতে সিটি করপোরেশন ঢাকা শহরের দোকান বানানোর আরও জায়গা খুঁজে পাবে। যেহেতু ক্রীড়া পরিষদের হাতে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তাই দোকান অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের প্রতিভা বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। এদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক অভিজ্ঞ ব্যক্তি জাফর ইমাম। দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ওলিম্পিক আন্দোলনের সাথে। দেশের ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশও ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশ ওলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব। অতিসম্প্রতি ওলিম্পিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারও পেয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, খেলাধুলোয় উন্নত কোন দেশের স্টেডিয়ামে দোকানপাট আছে কি? তিনি বললেন, অতো দূরে গিয়ে লাভ কি, প্রতিবেশী দেশের সল্টলেক এবং ইডেন গার্ডেনেই তো দোকান নেই। স্টেডিয়াম তো মার্কেট হতে পারে না।
তাহলে এ কথাটা আপনারা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বলেন না কেন? প্রশ্নে তিনি বললেন, আমরা সব সময়ই বলি এবং বলছি। কিন্তু আমরা তো স্টেডিয়াম বানাই না। তিনি বলেন, কমলাপুর স্টেডিয়ামে তিনশ’ দোকান নির্মাণ হচেছ- এটি একটি সমস্যা নিঃসন্দেহে। তবে এর চেয়েও বড় সমস্যা এ স্টেডিয়ামে যে মাঠ হচ্ছে তাতে খেলা সম্পন্ন হবে কিনা।
এক সময় ফেনসিডিলের বড় মার্কেট খ্যাত টিটিপাড়া বস্তির একেবারে কাছেই কমলাপুর স্টেডিয়াম ঘিরে দোকান বাণিজ্যে বিভোর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা। এতে শেষ পর্যন্ত কি কি বিক্রি করা হবে এর বিস্তারিত বলা হয়নি। তবে ক্রীড়া অভিজ্ঞরা বলছেন, কোন কিছু হিসাব না করেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এমন একটি জায়গায় তিনশ’ দোকান তৈরির চিন্তা করেছে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। বড় বড় ভেন্যুগুলো থেকে যেভাবে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকাটা যাতে প্রথম থেকে একেবারে খাঁ খাঁ না করে সে কারণেই তাদের এই দোকান কালচার। সায়েদাবাদ-কমলাপুর রোডে তেমন কোনও মার্কেটও নেই। কাজেই কমলাপুর স্টেডিয়ামের দোকানগুলোতে ভিড় হলেই কর্মকর্তারা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো ক্রীড়াঙ্গনে দর্শক এসেছে, দর্শক এসেছে ভেবে তৃপ্তি পাবেন। একজন খেলোয়াড় টিপ্পনী কেটে বললেন, সেক্ষেত্রে সমস্যা একটাই হতে পারে নামকরণ নিয়ে। কমলাপুর স্টেডিয়াম না জানি আবার কমলাপুর মার্কেটে পরিণত হয়। তার বক্তব্য, এক সময় ঢাকা স্টেডিয়াম বিখ্যাত ছিল খেলাধুলোর জন্যে। সারাদিনই এখানে ভিড় ছিল ক্রীড়ানুরাগী, ক্রীড়াবিদদের। এখন এখানে গেলে অনেক শব্দের ঝংকার শোনা যায়। স্টেডিয়াম হারিয়ে যাচ্ছে পল্টনের বক্তৃতায়। কমলাপুর স্টেডিয়ামের পরিণতি কি হবে- এর হিসাব অনেকেই মেলাতে পারছেন না। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দোকান বাণিজ্য আবার সবার কৌতূহলের কারণ হয়েছে। আপাতত এটি প্রমাণিত হয়েছে, খেলাধুলোর চেয়ে ব্যবসা বড়। খেলাধুলো কেবলই ক্ষতির। কোন আয় নেই। আয় করতে হলে দোকানের বিকল্প নেই। কাজেই খুব শিগগিরই যদি দোকানদাররা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের ফুল দিয়ে সম্বর্ধিত করে এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। # ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই দৈনিক মানবজমনে প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়।
রিভার্স সুইপ
- খেলাধুলো নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রথম নিয়মিত উপসম্পাদকীয় রিভার্স সুইপ। ২০০৩ থেকে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত ...
ইদানীং রাতে কি আপনি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন
- ইদানীং আপনি কি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন- রাতে কিংবা খুব ভোরে?কেন বলুন তো? কেন আবার! একবার ...
ক্রিকেটারদের নিশি ভ্রমণ, একটি পদত্যাগ এবং ...
- প্রকাশকাল: ২১-০৬-২০০৩, দৈনিক মানবজমিনে।বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)’র বর্তমান প্রশাসকদের রীতিমতো লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিয়েছেন অলিউল ...