ইদানীং রাতে কি আপনি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন
ইদানীং আপনি কি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন- রাতে কিংবা খুব ভোরে?
কেন বলুন তো?
কেন আবার! একবার আসুন। নিজের চোখে দেখুন- কি পরিস্থিতি খেলাধুলা অঙ্গনের?
ক্রীড়াঙ্গনের একজন সংগঠক হঠাৎ করেই ফোন করলেন। তার কথা রাখতে গিয়ে ক’দিন আগে অনেক রাতে ঢাকা স্টেডিয়ামে যাই। নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না- কোথায় এলাম ! এটা কি ঢাকা স্টেডিয়াম না কুড়ি বছর আগের কমলাপুর স্টেশন? এক সময় বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিস্তীর্ণ চত্বরেও এ দৃশ্য দেখা যেতো। বহু আলোকচিত্রী এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে পুরস্কৃত এবং প্রশংসিত হয়েছেন। আগেকার দিনের অনেক চলচ্চিত্রে এ দৃশ্য আছে। ২০০৩ সালে এ দৃশ্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে ঘিরে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই স্টেডিয়ামের চার দিকে। মানুষ আর মানুুষ। ঘুমাচ্ছে সবাই। ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ কোন ভেদাভেদ নেই। এ ভিড়ের মাঝে কাগজে আগুন লাগানোর দৃশ্য। প্রথমে ভেবেছিলাম মশার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্যই বুঝি ছিন্নমূল মানুষের এ ব্যবস্থা। কাছে যেতেই ভুল ভাঙ্গলো। কাগজে আগুন ধরিয়ে আয়েশ করে মাদকসেবীরা তাদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। কেউবা গাঁজা ফুঁকছে, হাতে ইনজেকশন নিচ্ছে। ক্রীড়া সংগঠকরা বললেন, স্টেডিয়াম এলাকায় এখন কি নেই বলুন- মাদকসেবী, ছিনতাইকারী, পকেটমার, সন্ত্রাসী। কেবল নেই ক্রীড়ানুরাগী। খেলাধুলাও নেই, নেই পরিবেশ। এভাবেই চলতে থাকলে আর ক’দিন পর স্টেডিয়াম এলাকায় সন্ধ্যায় পর কেউ পা মাড়াতে সাহস পাবেন না। আরেকজন সংগঠক বললেন, এত শ্রেণীর এত মানুষের আশ্রয়স্থল এখন ঢাকা স্টেডিয়াম! তারা মলমূত্র ফেলছে যত্রতত্র। নোংরা গন্ধ আর আবর্জনায় অস্থির দশা।
ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ফজলুর রহমান পটল গিয়েছিলেন স্টেডিয়াম এলাকা পরিদর্শনে। তিনি গিয়েছিলেন দিনের আলোয়। রাতের অনেক আপত্তিকর দৃশ্য তিনি দেখেন নি। এরপরও স্টেডিয়াম এলাকার সে সময়ের বিশৃঙ্খল, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাকে আহত করেছিল। সাথে সাথেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন- আমি এ অবস্থা আর দেখতে চাই না। তিনি এও বলেছিলেন, ক্রীড়াঙ্গনে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই হবে আমার প্রধান কাজ। ক্রীড়াঙ্গনের অনেক সংগঠক বুঝতে পারছেন না ক্রীড়ামন্ত্রীর এ নির্দেশের পরও কেন স্টেডিয়ামের পরিবেশ পাল্টাচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের পরিবেশসহ সব কিছুরই তত্ত্বাবধায়ক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ক্রীড়ামন্ত্রী এ পরিষদের চেয়ারম্যান। অথচ তার নির্দেশ কেন পালন করছে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা, এটা অনেকেই বুঝতে অক্ষম। তবে তারা এটা বুঝেন ক্রীড়া পরিষদের এ উদাসীনতা নতুন কিছু নয়। মূলত খেলাধুলার পরিবেশ, অবকাঠামো সৃষ্টিসহ খেলাধুলার উন্নয়নে সহায়তা করাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাজ। এ জন্য ক্রীড়া পরিষদের আছে বিশাল কর্মকর্তা-কর্মচারী বাহিনী। সরকারি কোষাগার থেকে তাদের বেতনও যোগানো হচ্ছে। কিন্তু তারা আসলে কি করছেন, এর কোন জবাবদিহিতা নেই। কাজে অবহেলার শাস্তি নেই। নেই চাকরি যাওয়ারও ভয়। জাতীয় ক্রীড়া পরি ষদের কর্মকর্তা আর কর্মচারীরা যদি ঠিকমতো কর্তব্য পালন করতেন, তাহলে আর যাই হোক ঢাকা স্টেডিয়াম মাদকসেবী, ছিনতাইকারী আর সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায় পরিণত হতো না। স্টেডিয়াম এলাকার পরিবেশ নোংরা, অস্বাস্থ্যকর হতো না। প্রথম পরিদর্শনে এসে ক্রীড়ামন্ত্রী স্টেডিয়ামের পরিবেশ দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তখন পরিবেশ নষ্ট করেছিলো দোকানদাররা। তাদের পণ্য টেনে এনেছিলেন দোকানের বাইরে। এ জন্য হাঁটাচলার সমস্যা হয়েছিল। আর এখন দিনের বেলা স্টেডিয়ামে গেলে অনেক ক্ষেত্রে নাকে রুমাল চাপতে হয়। নোংরা আর আবর্জনা চারদিকে। যে ফেডারেশন যে খেলার আয়োজন করে কেবল সে খেলার মাঠগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রায় দিনই কোন না কোন খেলার উদ্বোধন অথবা সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকছেন। স্টেডিয়াম এলাকায় যাচ্ছেন। ইদানীং তিনিও এ নিয়ে আর কথা বলছেন না। হয়তো ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্বহীনতায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে সংগঠকরা বলছেন, লক্ষণ ভালো নয়। স্টেডিয়ামে যদি খেলাধুলার পরিবেশ না থাকে, এটা যদি সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয় তাহলে এর ধকল কিন্তু সইতে হবে সবাইকে।
সুন্দর মাঠের সুন্দর পরিবেশ খেলাধুলার পয়লা শর্ত। সে কারণে খেলাধুলায় উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন মাঠগুলোর সৌন্দর্য শুধু উপভোগ্য নয়, দর্শনীয় স্থানও বটে। পর্যটকরা মাঠগুলো পরিদর্শনের সুযোগকে সৌভাগ্য হিসেবেই দেখেন। বিশ্বের সেরা মাঠগুলোর তত্ত্বাবধায়ক হলো ক্লাব। মাঠ ঘিরে ক্লাব গড়ে উঠে। মাঠের পরিচয় হয় ক্লাব দিয়ে। ক্লাব ঘিরেই রচিত হয় স্বপ্ন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এর মাঠে কেবল ম্যানইউ’ই খেলে না। বড় বড় প্রতিযোগিতাও হয়। তেমনি লর্ডস, ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়, এতে কোন সমস্যা হয় না। সারা বছর মাঠ সংস্কার, তত্ত্বাবধানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মতো কোন সংস্থারও প্রয়োজন হয় না। অনেকেই মনে করছেন, সর্বত্রই চলছে বেসরকারিকরণের যুগ। ক্রীড়াঙ্গনে মাঠগুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্লাবগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়ে সরকার একদিকে যেমন খেলাধুলার উন্নয়ন ঘটাতে পারে, তেমনি আয়ও করতে পারে ভালো। এ কথা যারা বলছেন, তারা ঢাকার একটি ক্লাবের সফল আয়োজনকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছেন। এক সময় ছিলো যখন সকল ফেডারেশনই তাদের বড় বড় ইভেন্টের আয়োজক হতো। আয় ব্যয়ের হিসাব তারাই জানতো। এরশাদ আমলে একবার এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তারা আয়োজনে সফলই হয় নি দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। সে সময় ঢাকার ফুটবল লীগ ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন উপচেপড়া দর্শক হাজির হতেন ফুটবল দেখতে। কিন্তু দৈনিক কত টিকিট বিক্রি হতো এর হিসাব কখনই প্রকাশ করতেন না আয়োজকরা। একেকটা ধাপ শেষ হওয়ার পর আয়োজকরা হিসাব উপস্থাপন করতেন। ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে বরাবরই এ নিয়ে অসন্তোষ ছিলো। তাদের অভিযোগ ছিলো যেহেতু টিকিট বিক্রির টাকার অংশীদার ক্লাবগুলো, তাই সংগঠকরা তাদের বঞ্চিত করতে এদিক সেদিক করেন হিসাব দেরিতে প্রকাশ করে। সংগঠকরা বলতেন, এত টিকিট বিক্রি হয় যে, হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া সম্ভব নয়। ঢাকা মোহামেডান প্রথমবারের মতো ম্যাচ শেষ হতে না হতেই জানিয়ে দিলো কত দর্শক টিকিট কেটে মাঠে ঢুকেছে। কত টাকা আয় হয়েছে। এর পর থেকে ফুটবল আয়োজকরাও প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন দিতে পারছেন। ক্রীড়া সংগঠকদের বক্তব্য, এদেশের খেলাধুলা বাঁচিয়ে রেখেছে কতগুলো ক্লাব। অথচ তাদের সমস্যার কোন শেষ নেই। বড় সমস্যা হলো তাদের কোন মাঠ নেই। ঢাকা মোহামেডানের মতো ক্লাবকে অনুশীলনের জন্য খেলোয়াড়দের বাসে বসিয়ে ঢাকায় মাঠের সন্ধানে বেরুতে হয়। অন্য ক্লাবগুলোর অবস্থা সহজে অনুমেয়। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময়ের জন্য সরকারি মাঠগুলো ক্লাবগুলোকে লিজ দিয়ে দিলে এ স্থাপনাগুলো যেমন ভালো থাকবে, এগুলোর যথাযথ ব্যবহারও হবে। ক্লাবগুলোই তত্ত্বাবধান করবে মাঠ। তারা আয় বাড়াতে সে ক্ষেত্রে বেশি বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। এতে করে অলসভাবে পড়ে থাকবে না মাঠগুলো।
অবশ্য মাঠের নিয়ন্ত্রণ ক্লাবগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়ার কোন চিন্তা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা করবেন- এমন সম্ভাবনার কথা ভাবতেও সাহস পাচ্ছেন না ক্রীড়া সংগঠকরা । তাদের বক্তব্য, মাঠই যদি না থাকে ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখতেই এমনটি চাইবেন না। বরং তারা দালানকোঠা আগামীতে আরও বানাতে উদ্যোগী হবেন যাতে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য তাদের চাকরি আরও পাকাপোক্ত হয়।
এক সময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নাম ছিলো জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। এ বোর্ড ক্রীড়াঙ্গনকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলো যে, ক্রীড়াঙ্গনই পড়ল মুখ থুবড়ে। তখন ক্রীড়া সংগঠকরা এক পর্যায়ে নীতি-নির্ধারকদের বোঝাতে সক্ষম হলেন, ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ নয় সম্প্রসারণই হওয়া উচিৎ এর কর্মকাণ্ড। তাই ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণের ‘‘নিয়ন্ত্রণ’’ উঠে গেল। হলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এক সময় এর ভবনের রঙও ছিলো লাল। এরশাদ আমলে ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে নানা ধমকও যেতো এই লাল দালানের কথা বলে। তাই পরবর্তীতে অনেক টাকা খরচ করে লাল দালানকে সাদাও করা হল। কিন্তু চরিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে না। কেবল সরকার পরিবর্তনের পর বিশেষ বিশেষ জায়গায় লোকের পরিবর্তন হয়। একেক সরকারের পুরনো লোকরাই তদবির করে এখানে আসেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চরিত্র পাল্টায় না। এখানে কাজ করার কি মোহ এটা অনেকের হিসাবেই আসে না। প্রেষণেও অনেকে আসেন। ক’দিন নাক ছিঁটকান। কিন্তু এরপর আর যেতে চান না।
কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক বললেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাজ হওয়া উচিৎ ক্রীড়ার সহায়তা দেয়া। কোথায় সবুজ মাঠ পাওয়া যায়, সেগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে সাধারণ মানুষের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। তারা তা না করে কেবল দালান নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আর হকি স্টেডিয়ামের পাশের যে বিশাল জায়গাটা আছে সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে গাছ আর ঘাস লাগিয়ে তারা বিশাল জনগোষ্ঠীকে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে পারেন। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক প্রতিভা। কিন্তু ক্রীড়া পরিষদ কখনই এমনটি চায় না। এমনকি বৃক্ষরোপণ অভিযানেও তারা এখানে গাছ লাগাতে আগ্রহী হয় না। তারা সব সময় খুঁজে নতুন এবং বড় প্রকল্প। বছর দেড়েক আগে ক্রীড়া পরিষদের নীতি-নির্ধারকরা স্টেডিয়াম এলাকার সকল স্থাপনা ভেঙ্গে নতুন করে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স করার স্বপ্ন ঝুলিয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা চালিয়েছিলেন। উদ্যোগ সফল হয় নি। এবার বলছেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিজস্ব ভবন হবে ২০ তলা। যথারীতি এখানেও বাণিজ্যিকীকরণের বিষয় আছে। তাই এ ঘোষণা নিয়ে কারও তেমন আগ্রহ নেই। ক্রীড়া পরিষদ তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে পারে নি। নিয়মিত বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার পরও স্টেডিয়াম এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয় কি করে? মিরপুর সহ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থাপনাগুলোর কি হাল? এর মাধ্যমে খেলাধুলার কতটা উন্নয়ন হচ্ছে? কাজেই ২০ তলা ভবন ক্রীড়াঙ্গনের কতটা উন্নয়ন করবে এ প্রশ্ন তোলাই যায়। বিশেষ করে এর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। একজন সংগঠক বললেন, ঢাকার এক নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামের কথাই ধরুন। বছরে কত বার এর সংস্কার হয়। যে কোন প্রতিযোগিতার কথা উঠলেই হলো, সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। তাও একই ক্ষেত্রেই সংস্কার হয় বার বার। এ সংগঠকের প্রশ্ন ঢাকা স্টেডিয়ামকে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হয় না কেন? আরেকজন সংগঠক টিপ্পনি কেটে বললেন, তাহলে ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখবেন কি করে? তিনি আরও বললেন, খাতাপত্রের হিসাব মিলিয়ে দেখুন, আর ক’দিন পর বিশ্বের ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে ঠাঁই করে নিতে পারে ঢাকা স্টেডিয়াম। কোন কোন সংগঠক মনে করেন, সংস্কার এবং লাভের সম্পর্ক আছে বলেই ঢাকা স্টেডিয়ামকে কোন বিশেষ খেলার জন্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না।
অলাভজনক আদমজী যখন বন্ধ করে দেয়া হলো, ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই তখন ধারণা করেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেও কিছু সংস্কার হবে। ক্রীড়া মন্ত্রী এমনই আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন পরিবর্তন হয় নি। লটারি, দোকান ভাড়া আর সরকারি বরাদ্দে ফুলেফেঁপে উঠেছে এ সংস্থাটি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গ্যারেজে আর গাড়ির ঠাঁই হয় না। পরিবহন পুলের ভাঙ্গা গাড়ি নিয়েই নীতি নির্ধারকরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আসেন। এরপরই তাদের গাড়ি পাল্টে যায়। ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছিল ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিল লটারি। এ অর্থ কতটা ক্রীড়াবিদদের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে, কারা এ তহবিলের বরাদ্দ পেয়েছেন এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে সাফ সোনা পাইয়ে দেয়ার পরও দেশে কোন সম্ভাবনা না দেখেই যে পালিয়েছেন বিমল চন্দ্র তরফদার আর কারার মিজানুর রহমানরা -এতে কোন সন্দেহ নেই।
ক্রীড়া সংগঠকরা বললেন, আগে ক্রীড়াবিদ, সংগঠক আর ক্রীড়ানুরাগীদের ভিড় ছিলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। এখন ভিড় ঠিকাদারদের। গেলো সরকারের আমলে অস্ত্রের মহড়াও হয়েছে। আসলেই পাল্টে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন। দালানকোঠা নির্মাণে অতিমাত্রার আগ্রহে মাঠের সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। দালান কোঠা নির্মাণে ঠিকাদার থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত গতানুগতিক ধারায় কমিশন সহ নানা আয়ের সুযোগ আছে বৈ কি। কিন্তু এতে ক্রীড়ার উন্নয়ন নেই। শুধু মাঠ দরকার, বাউন্ডারি নয়। স্টেডিয়াম সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। কিন্তু খোলা মাঠ সবার প্রতিভা বিকাশের সহায়ক। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা তাই ক্ষমতা গ্রহণ করেই নির্দেশ দেন, আপনারা হাসপাতাল নির্মাণ করবেন না, মাঠ তৈরি করুন আমার দেশের আগামী প্রজন্মের জন্য। যাতে তারা সবুজ মাঠে হেসে খেলে বড় হতে পারে। এতে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মন ভালো থাকবে। অপরাধপ্রবণ হবে না। আর মাঠগুলো নষ্ট করে হাসপাতাল (দালানকোঠা) করা হলে সব সুযোগই নষ্ট হবে। তখন একসময় দেখা যাবে-হাসপাতাল উপচে পড়েছে অসুস্থ রোগীতে।
ঢাকা স্টেডিয়ামের বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি দেখার পর অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন। নীতি-নির্ধারকদের কাছে এ দীর্ঘশ্বাস পৌঁছবে কিনা কে জানে। # ২০০৩ সালের ৫ জুলাই দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত উপসম্পাকীয়
রিভার্স সুইপ
- খেলাধুলো নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রথম নিয়মিত উপসম্পাদকীয় রিভার্স সুইপ। ২০০৩ থেকে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত ...
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কি সিটি করপোরেশনের এক্সটেনশন?
- খেলাধুলোয় যখন কোন সাফল্য নেই, নেই দর্শক কিংবা কোন উন্মাদনা-তখন খেলাধুলোর অবকাঠামোগুলো অলসভাবে ফেলে রাখার কি ...
ক্রিকেটারদের নিশি ভ্রমণ, একটি পদত্যাগ এবং ...
- প্রকাশকাল: ২১-০৬-২০০৩, দৈনিক মানবজমিনে।বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)’র বর্তমান প্রশাসকদের রীতিমতো লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিয়েছেন অলিউল ...