ক্রিকেটারদের নিশি ভ্রমণ, একটি পদত্যাগ এবং ...
প্রকাশকাল: ২১-০৬-২০০৩, দৈনিক মানবজমিনে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ( বিসিবি)’র বর্তমান প্রশাসকদের রীতিমতো লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিয়েছেন অলিউল ইসলাম; সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচক। তিনি পদত্যাগ করেছেন তার দায়িত্ব থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বিপর্যয়ের পর দেশের ক্রীড়ামোদী, সাবেক ক্রিকেটার, সংগঠকরা তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। এ দাবি আমলে নেন নি অলিউল ইসলাম কিংবা নির্বাচকরা। যদিও অলিউল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছিলেন, আমি পদত্যাগ করতে রাজি। কিন্তু এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলে দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী সবাই আমার কাঁধেই ব্যর্থতার সকল দায় চাপিয়ে দেবে। সেই অলিউল ইসলামই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বকাপের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অলিউল ইসলাম সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সামনে অলিউল ইসলাম বলেছিলেন, বিশ্বকাপের পুরো দলটি তিনি বা নির্বাচকদের মতামতে হয়নি। বাংলাদেশ দলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। পারেন নি। নির্বাচকদের অযোগ্যতার কথা তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। অলিউল ইসলাম পদত্যাগপত্রে বলেছেন, যেহেতু তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আমাকে নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে, তাই এ পদে থাকা সমীচীন মনে করছি না। বোর্ড সভাপতি আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করলেও আমি আর এ দায়িত্বে থাকছি না। অলিউল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের নির্বাচক কমিটিকে নিয়ে আগাগোড়া সমালোচনা হয়েছে। তাদের প্রতিটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কে ভরা। সবচেয়ে বড় কথা, এ নির্বাচক কমিটির নির্বাচিত প্রতিটি দল নজিরবিহীন ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছে। এরপরও অলিউল ইসলামের পদত্যাগ ক্রিকেটাঙ্গনে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা খুশি অলিউল আমাদের রিপোর্টের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। জাতীয় দলে তার সমালোচক এক ক্রিকেটার বলেছেন, দেরিতে হলেও অলিউল ইসলাম বুঝতে পেরেছেন, আর সম্মানের মূল্য পদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার স্বার্থে এমন ক্রীড়াসুলভ মনোভাব একান্ত জরুরি ব্যর্থদের কেউ কেউ নির্লজ্জের মতো পদ আঁকড়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এতে কোন ফায়দা নেই। নিন্দা তাকে কুড়াতেই হবে। সে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, অলিউল যদি স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে নিজের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তার অন্য দুই সহযোগীর কি সে মর্যাদাটুকুও নেই। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নির্বাচক কমিটির সমালোচনা হয়েছে, বাকি দুই নির্বাচক এর দায় এড়াবেন কি করে? আর এ রিপোর্টে বোর্ডের যে সব কর্মকর্তার নাম প্রকাশ্যে এসেছে, তারাও কি আত্মসম্মানবোধের মাথা খেয়ে বিসিবি’র পদ আঁকড়ে থাকবেন? বিশ্বকাপের মতো আকাক্সিক্ষত বড় মাপের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে যারা লজ্জিত করেছেন, তারা ক্রিকেটকে কি দিতে পারবেনÑ এ প্রশ্ন করাই যায়। একজন সংগঠক বললেন, যার নিজের কোন আত্মসম্মানবোধ নেই, তিনি অন্যকে সম্মানজনক লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করবেন কি করে। যে কোন খেলাধুলোই হলো সম্মানের লড়াই। এখানে প্রশাসক হিসেবে যারা আসেন, কাগজে-কলমে তারা অবৈতনিক। তাদের সম্মানটাই বড়। ক্রিকেটাঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন, তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্ত ক্রিকেট প্রশাসকরা তাদের সম্মানের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। অলিউল ইসলামের পদত্যাগের পর তাদের আত্মসম্মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য ক্রিকেট বোর্ডের কোন কোন কর্মকর্তা বলছেন, অলিউল ইসলামের পদত্যাগের কারণ শুধুমাত্র বিশ্বকাপের ব্যর্থতা উদঘাটনে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নয়। অস্ট্রেলিয়াগামী দলেও এমন এক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অলিউল ইসলাম যার যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান। অস্ট্রেলীয় কোচ ডেভ হোয়াটমোর নিজের পছন্দে এ খেলোয়াড়কে দলে ঢুকিয়েছেন। একজন ক্রিকেট অভিজ্ঞ বললেন, এ বক্তব্যও যদি সঠিক হয়, তাহলেও বলতে হবে অলিউল ইসলাম অন্তত শেষ মুহূর্তে হলেও নিজের আত্মসম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছেন। অনেকে তাকে সাধুবাদ দিতে চাইছেন এই কারণে যে, জীবনে জাতীয় দলে না খেলেও জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালনকারী অলিউল ইসলাম কতগুলো সত্যি প্রকাশ করেছেন। এর বড় সত্যি হলো, যোগ্যতা, মেধা, পারফরমেন্স নয়, বাংলাদেশ জাতীয় দল গঠনে আরও কিছু পছন্দ-অপছন্দ কাজ করে। আর সে কারণেই জাতীয় দল কাক্সিক্ষত ফলাফল পায় না। এবারের বিশ্বকাপ দল গঠনের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছিল। আর তাই নির্বাচকরা যাকে চেয়েছেন, অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে নেয় নি। একজন বর্ষীয়াণ খেলোয়াড় উদাহরণ হিসেবে দু’টি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন। বললেন, ১৯৯৪ সালে একজন নির্বাচক নানা কায়দা-কানুন করে তার ছেলেকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু এ ক্রিকেটারের সার্ভিস জাতীয় দল কোনদিন পায় নি। আরেকটি ঘটনা ’৯৯ এর বিশ্বকাপের আগে। বিসিবি’র একজন বড় কর্তার অপছন্দে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেয়া হয়েছিল। জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় নান্নু শেষ মুহূর্তে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপের নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা লজ্জিত হন নি। তিনি এখনও আছেন ক্রিকেট প্রশাসনে। বরং আগের চেয়ে আরও বড় স্থানে। জাতীয় দলের একজন সাবেক অধিনায়ক বললেন, দেশের স্বার্র্থ বিনষ্টকারী এ সংগঠকদের বিচার হওয়া উচিত । প্রকাশ্যে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার। কারণ কারও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছার দায় দেশ নিতে পারে না। অলিউল ইসলামের পদত্যাগের পর ক্রীড়াঙ্গনে এ প্রশ্নটাই উড়ছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দায়ীরা এ দেশ এবং ক্রিকেটকে কি দিতে পারবেন? অলিউলের মতো আত্মসম্মানবোধ কি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযুক্ত আর কারোরই নেই?
ক্রিকেটারদের নিশি ভ্রমণ এবং কাঠগড়ায় তদন্ত কমিটি
ওদিকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব থেকে অলিউল ইসলাম সরে দাড়াঁলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্টে শৃঙ্খলার ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত কোন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে ক্রিকেট বোর্ড কোন অ্যাকশন নেয় নি। এমন কি কারণ দর্শাতেও চেষ্টা করে নি। বরং কোন কোন কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন নানা প্রসঙ্গ সামনে এনে। সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হলো- অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটসহ কতিপয় ক্রিকেটারের নিশি ভ্রমণ । তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে, কেনিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে পাইলট গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে ছিলেন। তারা আরও ক’জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধেও নিশি ভ্রমণের অভিযোগ এনেছেন। তদন্ত কমিটির এ রিপোর্ট কতটা সত্যি তা উদঘাটনে কোন ব্যবস্থা নেয় নি ক্রিকেট বোর্ড। বরং অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের বিনা বাক্য ব্যয়ে ডেকে এনেছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন, এটা কোন কথা হতে পারে না। তদন্ত কমিটি যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে, সে খেলোয়াড়ই হোক, আর কর্মকর্তাই হোক তাকে সবার আগে শো-কজ দিতে হবে। বোর্ড যদি কোন অ্যাকশনই না নেয়, তাহলে কেন তদন্ত কমিটি?
অবশ্য তদন্ত কমিটি’র রিপোর্ট প্রকাশের পর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, তিনি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আইনজীবী এবং বোর্ডের সাথে কথা বলবেন। কারণ, পাইলট মনে করেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নিশি ভ্রমণের অভিযোগ সত্যি নয়। নিশি ভ্রমণের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্য ক্রিকেটাররাও অনুরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও বলেছেন, আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় নি তদন্ত কমিটি। তারা আমাদের কাছ থেকে কিছু জানতেও চায় নি। গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে রাত কাটানো প্রসঙ্গে কতিপয় ক্রিকেটারের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা সরব, ঠিক তখনই আমরা কথা বলি তদন্ত কমিটির একজন দায়িত্বশীলের সাথে। তিনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তবে বলেন, তারা কোন বিতর্কে জড়াবেন না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ব্যর্থ হওয়ার পর বোর্ড তাদের উপর তদন্ত করে একটি রিপোর্ট পেশ করার দায়িত্ব দেয়। তারা গেল আড়াইমাস কষ্ট করে রিপোর্ট পেশ করেছেন। এ রিপোর্ট কারও পছন্দ হতেও পারে, নাও হতে পারেÑ এ নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তবে, ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি তাদের লিখিতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বললেন, আমরা কারও শাস্তির কোন সুপারিশ করি নি। কেবল ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছি। আর এখানে আমরা কিছু বানাতেও যাই নি। আমাদের কাছে সব কিছুই রেকর্ড করা আছে। এ কর্মকর্তা জানালেন, খালেদ মাসুদ পাইলট যে হোটেলের বাইরে গভীর রাত পর্যন্ত ছিলেন, সেটাতো বিশ্বকাপ ফেরত ম্যানেজারের রিপোর্টেই আছে। কোচ মহসিন কামালও বলেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, একই অভিযোগ অন্য যে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধেও উঠেছে, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে ডাকলেন না কেন। তার বক্তব্য, বিচার করবে বোর্ড। সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে তারা। আমাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কি আছে। তাছাড়া, এত বেশি সংখ্যক সাক্ষ্যদাতা অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের নিশি ভ্রমণ সামনে নিয়ে এসেছেন যে, তাদের আর ডাকার প্রয়োজন মনে করি নি। তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সিআইডি’র লোক নই। ক্রিকেটারদের ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি করাটাও আমাদের কাজ নয়।
অন্যদিকে, তদন্ত কর্মকর্তার এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, ম্যানেজারের রিপোর্টে যদি কোন ক্রিকেটারের নিশি ভ্রমণের কথা লেখা হয়ে থাকে তাহলে এত দিন বোর্ড এ ব্যাপারে কোন অ্যাকশন নিলো না কেন? এখানে বোর্ডের কোন দুর্বলতা কাজ করেছে? জাতীয় দলের সাথে ঘনিষ্ঠ একাধিক সংগঠক বলেছেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এই প্রথমবারের মতো ক্রিকেটারদের নিশি ভ্রমণের কথা লিখলেও অভিযোগ নতুন নয়। ১৯৯৪-এর কেনিয়া আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অফিসে হামলা হয়েছিল। নাইরোবিতে বসে ক্রিকেটাররা এ খবর শুনে আতঙ্কিত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাই বলে অনেকেরই নিশি ভ্রমণের সমস্যা হয় নি। জ্যাকপট খেলতে দলের সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও অনেক রাতে হোটেলে ফিরেছেন। সে সময় বাংলাদেশ দলের কোচ মহিন্দর অমরনাথ খেলোয়াড়দের সাথে একই হোটেলে থাকতেন না। আর ম্যানেজার রেজা-ই করিম নিজেকে নিয়েই ডুবে থাকতেন। ’৯৯ বিশ্বকাপের সময় কোন কোন খেলোয়াড়কে নিশি ভ্রমণ থেকে নিবৃত করতে অধিনায়ক সাংবাদিকদের লিখে দেওয়ার ভয় পর্যন্ত দেখিয়েছেন। গর্ডন গ্রিনিজের মতো কড়া কোচ আর তানভির মাজহার তান্নার কঠিন শাসন থাকলেও অনেক ক্রিকেটারকে ম্যাচের আগেও গভীর রাতে হোটেল রুমের বাইরে দেখা গেছে। সে কারণেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সত্যতা অনেকের পক্ষেই অস্বীকার করা সম্ভব হচ্ছে না।
কি লাভ হলো তদন্ত কমিটির রিপোর্টে?
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতায় হতাশ দেশের মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট প্রশাসকরা প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী যেই হোক, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর সবাই সেই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা দেখার অপেক্ষায় উদগ্রীব। একই সাথে হিসাব- নিকাশও চলছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আদৌ কি কোন লাভ হলো? ’৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নায়ক সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বললেন, কোন অ্যাকশনই যদি না হবে তাহলে আর তদন্ত কেন। বোর্ড সভাপতি তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে বলে দিলেন, আমাকে মাফ করুন। আর এতেই ঘটনা শেষ হয়ে যাবে। দেশের অর্থ খরচ করে জাতিকে যে ঠকানো হলো এর মূল্য কে দেবে। যারাই দোষী হয়েছে, তাদের শো-কজ করা উচিত ছিল। কোন অ্যাকশন না নিয়ে বোর্ডের কোন মতেই সংবাদ সম্মেলন করে রিপোর্ট উপস্থাপন করা উচিত হয় নি। প্রধান নির্বাচক পদত্যাগ করেছেন, ভাল কথা। তিনিও একজন ব্যর্থ সংগঠক। মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন নিয়েছেন, বোর্ডের টাকায় বিশ্বকাপের রণক্ষেত্রেও থেকেছেন। বোর্ড সভাপতিও সেখানে ছিলেন। কোচ, ম্যানেজার, অধিনায়ক কিংবা খেলোয়াড় কারও বিরদ্ধে তো তারা অ্যাকশন নেন নি। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের আগেই তো গর্ডনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। এতে আমাদের খেলায় তো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় নি। বরং বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে। সময় অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়ার জন্যে এবার তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার। নান্নু বলেন, অলিউল ইসলাম তদন্ত কমিটির কাছে দল গঠনে হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। এতে তো পরিষ্কার হয়ে গেছে বোডের্র প্রভাবশালী কর্মকর্তারা যাদের ওপর নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দিতে পারেন, তাদেরই তারা নির্বাচক কমিটিতে নিয়ে আসেন। কাগজে-কলমে যে দলই গঠন করা হোক না কেন, এখানে যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না। পর্দার আড়ালে অনেক কল-কাঠি নাড়া হয়। মাঠে যেহেতু খেলেন ক্রিকেটাররা, ব্যর্থতার দায়ও শুধু তাদের উপরই বর্তায়। আসল খেলোয়াড়রা বরাবরই বেঁচে যায়।
নান্নু মনে করেন, এই প্রথম যেহেতু কোন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে, কোন কমিটমেন্ট সৃষ্টি হবে না। তবে খেলোয়াড়দের চেয়ে ক্রিকেট কর্মকর্তাদের কমিটমেন্ট আরও বেশি জরুরি। কারণ, কর্মকর্তারাই সব কিছু করেন। খেলোয়াড়রাতো শুধুই খেলেন।
রিভার্স সুইপ
- খেলাধুলো নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রথম নিয়মিত উপসম্পাদকীয় রিভার্স সুইপ। ২০০৩ থেকে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত ...
ইদানীং রাতে কি আপনি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন
- ইদানীং আপনি কি ঢাকা স্টেডিয়ামের দিকে গিয়েছিলেন- রাতে কিংবা খুব ভোরে?কেন বলুন তো? কেন আবার! একবার ...
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কি সিটি করপোরেশনের এক্সটেনশন?
- খেলাধুলোয় যখন কোন সাফল্য নেই, নেই দর্শক কিংবা কোন উন্মাদনা-তখন খেলাধুলোর অবকাঠামোগুলো অলসভাবে ফেলে রাখার কি ...