একটি মিডডে’র স্বপ্ন

1425381319_ds000.jpg

কোন এক বিকালে হঠাৎই এসেছিল ফোনটা। অপরপ্রান্তে দৈনিক ভোরের কাগজের প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরী। যিনি ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়ন(আইপিউ)-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট। খুব দ্রুতই কথা বললেন। সরাসরি প্রশ্ন তাঁর, একটি বিকালের কাগজের সম্ভাবনা কতটুকু? ঝটপট উত্তর আমার-অনেক। পাল্টা প্রশ্ন তাঁর, দায়িত্ব দিলে নেবেন? উত্তর যেন জিভের আগায়, হ্যাঁ। ‘পরে কথা বলছি’ বলেই লাইনটা কেটে দিলেন। একটি মিডডে’র স্বপ্নে ঢুকেছিলাম এভাবেই। আমি তখন ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন-এর বার্তা সম্পাদক। টানা নয় বছর ধরে এ দায়িত্বে। আর হঠাৎ ফোনেই নতুন সিদ্ধান্ত- তা নয়। ক্রীড়া সাংবাদিকতা করার সুবাদে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমার কাছে তিনি একজন আইডিয়ার ভান্ডার। তার সঙ্গে আড্ডা মানেই হলো নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার সুযোগ। তিনি উপমন্ত্রী থাকার সময় আমরা একটি নতুন ধারার টিনেজ পত্রিকার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। বলাই চলে, সাবের হোসেন চৌধুরীর কোন প্রকল্পে যুক্ত হবার জন্যে আমি একপ্রকার মুখিয়েই ছিলাম। তার ফোনের পর দ্রুতই পানি গড়ালো। মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকলো। কর্ণফুলী গ্রুপে মিডিয়া কনসালট্যান্ট হিসেবে যুক্ত হলাম নতুন স্বপ্নের সূচনায়। তবে, বিকেলের কাগজের চিন্তাটাকে ভালোভাবে নেননি শুভাকাঙ্খী, ঘনিষ্ঠজনরা। তারা অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বার বারই নিষেধ করেছেন ঝুঁকি না নিতে।
একথা সত্যি, বিকালের কাগজ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন অনেকেই। এই রাজধানীতেই চেষ্টা হয়েছে অনেকবার। স্বাধীনতার আগে যেমন চেষ্টা হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে স্বাধীনতার পরেও। কিন্তু সফল হননি কেউ। এর কারণ, সমস্যার এক নম্বরেই ছিল পাঠক। অভিজ্ঞরা বলেছেন, সকালে পত্রিকা পড়ার যে অভ্যস্ততা গড়ে উঠেছে পাঠকের। এর বাইরে এসে বিকালের দৈনিককে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন তারা। সঙ্কট ছিল হকারেরও। সকালে পত্রিকা বিক্রি করে ক্লান্ত হকাররা বিকালে পত্রিকা বিক্রিতে আগ্রহী নন। পাঠক আর হকার না থাকলে বিজ্ঞাপনদাতারা আগ্রহী হবেন কেনো? কমবেশি সব শুভাকাঙ্খীই বলে দিলেন, বিকালের কাগজের চেষ্টা হতে পারে মরা গাছে ফুল ফোটানোর মতোই। তবে, আমার তো আর ফিরে যাবার উপায় ছিল না। আমি পুরনো সম্পর্ক চুকিয়ে নতুন স্বপ্নে জড়িয়েছি। তখন সান্তনা খুঁজলাম, ফেল তো অনেকেই করেছেন। ব্যর্থ হলে সে তালিকায় না হয় যুক্ত হবে আমার মতো অখ্যাত এক তরুণও। কিন্ত্ত সফল হলে? নি:সন্দেহেই হবে একটা উদাহরণ। ইতিহাসের অংশ হতে কে না চায়। কাজেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটাই শ্রেয়।
প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরীর উৎসাহ তখন তুঙ্গে। তার সঙ্গে যুক্ত হলেন মুদ্রাকর কবি তারিক সুজাত; তথ্য প্রযুক্তির সর্বশেষ আপডেট নিয়ে যিনি নিত্য গবেষণা করেন। প্রতিবেশী দেশের প্রভাবশালী দৈনিকের তরতাজা বিকালের সংস্করণ তার হাতে। বিকালের কাগজের সম্ভাবনার পক্ষে সর্বশেষ উদাহরণ। পরম উৎসাহে সাবের হোসেন চৌধুরী বিনা পয়সায় বিকালের কাগজ বাজারে ছাড়তে চান। বিনা পয়সায় বিকালের কাগজের ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা কভার করতে গিয়ে লন্ডনে দেখেছি, পাতাল রেলে বিনা পয়সার বিকালের কাগজ-মেট্রো। দিস্তা দিস্তা কাগজের পত্রিকা। কিন্ত্ত কেউ বাড়িতে নেন না। ট্রেনে পড়ে সেখানেই সিটে ফেলে যান। এরপর নতুন যাত্রী সিটে বসার সময় সেই কাগজে চোখ বুলান। একটি কাগজ অনেকবার হাত বদল হয়। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে এটি খুবই পছন্দের। বিজ্ঞাপনের টাকায় তাই বিনা পয়সায় বিকালের পত্রিকা বিলি হয়।
আমাদের এখানেও মাঝে মাঝে সকালে বিভিন্ন পত্রিকা বিনা পয়সায় দেয়া হয়। হকার নেতারা এমন ফর্মূলা হরহামেশা পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে দেন। তবে যতগুলো পত্রিকা এমন কাজ করেছে, শেষ পর্যন্ত তাদের খুব একটা লাভবান হতে দেখিনি। এক সময় দেখতাম আনসারবাহিনীর পত্রিকা প্রতিরোধও ট্রাকে করে বিনা পয়সায় রাস্তায় রাস্তায় বিলি হচ্ছে। কাড়াকাড়ি করে অনেকে পত্রিকা নিলেও পরে কেজি দরে বিক্রির ঘটনাও কম হয়নি। আমাদের দেশে অনেক পত্রিকা এজেন্টের বাসা কিংবা অফিস রীতিমতো পত্রিকার গোডাউন। বাজারে পত্রিকা চলে না। তবুও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ জোর করে সংখ্যা পাঠায়। কি করবেন এজেন্টরা? কেজি ধরে বিক্রি করেন। মালিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গোডাউন ভাড়া আদায় হয়। ব্যাপারটাই যেন এরকম, পত্রিকা পড়ার উপযোগী হলে মানুষ পয়সা দিয়ে হলেও কিনবে। পছন্দ না হলে বিনা পয়সায়ও চলে না। এ বাস্তবতায় বিকালের কাগজ বিনা পয়সা বিক্রির চিন্তা গোড়াতেই বাদ হয়ে যায়। বরং সিদ্ধান্ত হয়, আগাম মূল্য পরিশোধ করে হকারদের পত্রিকা কিনতে হবে। যেটি দেশের আর কোন পত্রিকাই করে না। আমরা যখন হকার নেতাদের সঙ্গে বিকালের কাগজ নিয়ে মতবিনিময় করতে চাইলাম, তারা তাচ্ছিল্য করলেন,‘সকালেই পারেন না, আবার বিকালে!’ তাদের এ মনোভাবই আমাদের জন্যে শাপে বর হয়েছিল। কারণ প্রচলিত বিক্রয় ব্যবস্থায় নতুন প্রকল্প দাঁড় করানো সম্ভব নয়, এ পরিকল্পনাটা আমরা আগেই করেছিলাম। পেশাদার হকাররা অনাগ্রহী হওয়ায় আমাদের জন্যে সুবিধাই হলো। আমরা অখ্যাত লোক খুঁজে তাদের হাতে কাগজ তুলে দিয়েছি। যারা আমাদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছেন।
সকালের পত্রিকার উদাহরণ অনেক। কিন্তু বিকালে কোন পত্রিকা নেই। তাহলে প্রস্তুতিতে কোন উদাহরণ অনুসরণ করবো? হিমশিম অবস্থা তখন আমাদের। তবে দ্রুতই একটা ফর্মূলা বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আলাদাভাবে ডিক্লারেশন নিয়ে স্বাধীন একটি বিকালের কাগজ পূর্ণ প্রস্তুতিতে প্রকাশের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু কেন জানি হঠাৎ তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে যায়। নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার আগেই অনেকটা প্রস্তুতি পর্ব শুরু করতে হয় একটি জাতীয় দৈনিকের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। বিকালের কাগজ নয়, ভোরের কাগজ দিনেরশেষে হলো আমাদের প্রথম মিশন। যেহেতু ভোরেরকাগজের তৃতীয় অর্থ্যাৎ বিকালের সংস্করণ এটি। তাই ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত আমাদের নেতৃত্ব দিলেন। যদিও আমাদের টিম ছিলো একেবারেইই আলাদা। অনেকটাই স্বাধীন। আমি ছিলাম এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে। কোন দৈনিকের নিয়মিত বিকালের সংস্করণ প্রকাশের ঘটনাও ছিলো সেটি দেশে প্রথম। স্বাধীন মিডডে প্রকাশের স্বপ্ন পূরণ হতে অপেক্ষা করতে হয় আরও দুবছর। ২০০৭ এর ২০ আগস্ট প্রকাশিত হয় দেশের প্রথম এবং একমাত্র মিড ডে ট্যাবলয়েড দৈনিক দিনেরশেষে। সাবের হোসেন চৌধুরী ছিলেন এর সম্পাদক এবং প্রকাশক। আর পত্রিকাটি প্রকাশে কাজ করি আমরা সেই পুরনো টিমই। তবে এবার আমরা অনেক বেশি স্বাধীন। সেই মুহূর্তটা আমাদের জন্যে ছিল অন্যরকম এক আনন্দের।উৎসবের। এটিতো একটি ইতিহাসও নি:সন্দেহে। এর আগে কোন বৈকালিক প্রকাশনা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। এই রাজধানী ঢাকাতে আমরা কুড়ি হাজারের বেশি পত্রিকা বিক্রি করেছি প্রতিদিন। তাও হকাররা আগে টাকা দিয়ে পত্রিকা কিনেছেন। দেশের প্রথম ‘বারকোড’ দেয়া পত্রিকা, বিক্রি হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরেও। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার গ্রেফতার, সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির খবরগুলো রাজধানীর পত্রিকা পাঠকদের কাছে সবার আগে আমরাই দিতে পেরেছি।
সকালে একটি দৈনিক প্রকাশিত হলে ফাইলে থাকা অন্য দৈনিকগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নিজেদের কাগজের মান যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। প্রতিটি পত্রিকা অফিসের দায়িত্বশীলরা প্রতিদিনিই এভাবেই নিজেদের মান যাচাই করেন। দিনেরশেষে একমাত্র মিডডে হওয়ায় অন্য কাগজের সঙ্গে মেলানোর সে সুযোগ ছিলো না। তবে আমরা আমাদের সারাদিনের পরিশ্রম যাচাইয়ে একটা মানদন্ড নির্ধারণ করেছিলাম। সেটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদ। আমরা গরম কাগজ নিয়ে বসে প্রতি সন্ধ্যায় মিলাতাম, আজ কোন কোন চ্যানেলের সংবাদের সঙ্গে পারলাম কিংবা পারলাম না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় দিনেরশেষের নিউজরুমের এই প্রতিযোগিতা আমাদের অনেক বেশি উজ্জীবিত করতো। সাহস আর মনোবল বাড়াতো।
যানজটের এই নগরীতে দিনের বেলা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পত্রিকা বিতরণ একেবারে সহজসাধ্য নয়। আমরা বোধ হয় সময়ের একটু আগেই মিডডে চালু করেছিলাম। ঢাকা শহরে যখন মেট্রো রেল চালু হবে, তখন বিকালের কাগজের একটা ভালো বাজার সৃষ্টি হতে পারে বৈকি। দেশের প্রথম মিডডে হিসেবে আমাদের সব সময়ই পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই এগুতে হতে হয়েছে। যে রাজধানীতে বিকালের কোন কাগজ টিকতেই পারেনি, সেখানে শুন্য কপি অবিক্রীত থাকার রেকর্ড নিয়ে দিনের পর দিন কিভাবে বিক্রি হয় দিনের শেষে- এমন প্রশ্ন অনেক সময়ই উঠেছে। কারো কারো অবিশ্বাসও ছিলো। কিন্ত্ত তিনি যখন শাহবাগ, আজিজ মার্কেট , ফার্মগেট কিংবা গুলশানে যেতেন, হাতে হাতে এ পত্রিকা দেখতেন, অনেকেরই বিস্ময়ের অন্ত থাকতো না। চোখ বুঝেই এ কৃতিত্ব দিনেরশেষের গোটা টিমের । কার নাম লিখবো? টিমের কাকে বাদ দিবো? এতটুকু জায়গায় সবার প্রতি সমান বিচার করা যাবে না। তাই আলাদাভাবে কারো নাম উল্লেখ না করেই বলতে পারি অবদান কিন্ত্ত সবারই সমান। দিনেরশেষের স্তম্ভ ছিলো উদ্যমী একটি রিপোর্টিং টিম। যে টিমের প্রতিটি সদস্য ছিলেন অলরাউন্ডার। অসম্ভব পরিশ্রমী। ভাবা যায়, কোন সংবাদপত্রের অফিস শুরু হবে সকাল আটটায়। আর সকাল সাড়ে আটটায় হবে প্ল্যানিং মিটিং?
সংবাদের পেছনে সারা রাত ছুটে ক্লান্ত সাংবাদিকের ঘুম ভাঙবে একটু বেলা করে- ঐতিহ্য এমনটাই। কিন্তু দিনেরশেষে’র সংবাদকর্মীরা এ ঐতিহ্যের পরিবর্তন আনেন। অফিস যাত্রীদের আগেই তারা পৌঁছে যেতেন অফিসে। শুধু তাই নয়, সূর্য ওঠার অনেক আগেই কখনও শুরু হয়ে যেতো তাদের সংবাদ সংগ্রহ। পত্রিকা প্রকাশের আগের দু’মাস এর রিহার্সাল হয়েছে। প্রথম দিকে সকালে কারো কাছে, বিশেষ করে কোন রাজনীতিবিদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তারা রীতিমতো বিস্মিতই হতেন- এতো সকালে কি? কিন্তু দিনেরশেষে প্রকাশের ক’মাস পর এ ঐতিহ্যে পরিবর্তন আসে। তখন কেউ আর বিস্মিত হন না। সকালে কাউকে ফোন করে পত্রিকার কথা বললে এর উত্তর আসে- কি দিনের শেষে থেকে বলছেন? সকালে অফিসে আসতেন বলেই যে বিকালে, অন্য অফিসের মতো দিনের শেষে’র সংবাদকর্মীদের কাজ শেষ হয়ে যেতো- তা নয়। পত্রিকা প্রেসে যাওয়ার পরও দিনেরশেষের সংবাদকর্মীকে খবরের শেষ অংশের পেছনে ছুটতে হতো অন্য সংবাদকর্মীর মতোই। পরের দিন সকালেই তো রিপোর্ট লাগবে। মাঠ ছেড়ে দেয়ার সুযোগ কই।
১/১১-এর টালমাটাল পরিস্থিতিতেই বাজারে ছিল দিনেরশেষে। দীর্ঘ পরিক্রমায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়কে ধারণ করেছে এই মিডডে। এর সংবাদকর্মীদের ভান্ডারে তাই অনেক অভিজ্ঞতা। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসায় গভীরাত পর্যন্ত দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের ভিড় ছিল। তিনি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। প্রধান প্রধান মিডিয়ার ধাক্কায় দিনেরশেষের সংবাদকর্মী শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাৎকার নিতে পারেন নি। তবে তার দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হয়েছিলেন। পরের দিন ভাগ্যের শিকে ছিড়বে এমনটি বলেছিলেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। কিন্তু সেই সময়টা যে একেবারে সাত সকালে সেটা হয়তো ভাবেন নি ড. ইউনূস নিজেও। গেঞ্জি গায়ে আর পায়জামা পরা ড. মুহম্মদ ইউনূস ভোরে শরীর ঝালিয়ে নেয়ার সময় দরজার বাইরে আবিষ্কার করেন অপেক্ষামান দিনেরশেষের রিপোর্টারকে। তার কতর্ব্য নিষ্ঠায় রীতিমতো বিস্মিত হন তিনি। তাই নাশতার টেবিলে বসেই শুধু সাক্ষাৎকার দেননি, দিনেরশেষে হাতে নিয়ে যেভাবে উচ্ছাস প্রকাশ করেন, সেই ছবি অনেক দিন আমরা আমাদের বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করেছি।
আজকাল দল বেধে কারো সাক্ষাৎকার নেয়া, কিংবা একজন সাক্ষাৎকার নিয়ে অন্যদের মাঝে বিলি বন্টনের মতো ঘটনা রিপোর্টারদের মাঝে অহরহ ঘটছে। এতে করে কারো মৌলিকত্ব থাকছে না। সংবাদ প্রচারের সময় এক মিডিয়ার সঙ্গে আরেক মিডিয়ার পার্থক্যও কোন কোন সময় খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। দিনেরশেষের রিপোর্টারদের কপি করার এই সুযোগ ছিলো না। কেউ যান আর না যান, দিনেরশেষের সংবাদকর্মীকে যেতেই হতো ঘটনা কভারে। দুপুরের মধ্যে মেকআপ শেষ হওয়ায় কারো জন্যে তার অপেক্ষার সুযোগ ছিলো না। আর্ন্তজাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত শুটার আসিফকে পেটানোর ছবিটি পেয়েছিলেন একমাত্র দিনেরশেষের আলোকচিত্রীই। এক-এগারোর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাল ছাত্র বিক্ষোভের শেষ ছবিটিও ছাপা হয়েছিল দিনেরশেষেতেই। কারণ সন্ধ্যায় কারফিউ এবং এরপর ওই খবর মিডিয়ায় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। কোন দৈনিক পরদিন এ ছবি ছাপতে পারেনি।
যাইহোক, হঠাতই যে স্বপ্নের সূচনা, আবার হঠাৎ ঝড়েই আর দশটি পত্রিকার মতোই এলোমেলো দেশের একমাত্র মিডডে। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে এ টিমের সদস্যরা ছিটকে পড়েন এদিক সেদিক। কিন্তু দিনের শেষে থেকে প্রাপ্তি, রিপোর্টিংয়ের অনুশীলন, চর্চা আর পেশাদারিত্ব- সেটি হারিয়ে যায়নি। দিনেরশেষের রিপোর্টাররা এখনও সক্রিয় রিপোর্টিং অঙ্গনে; হয়তো আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানে। ফি বছর কেউ কেউ সেরা রিপোর্টিংয়ের পুরস্কারও জিতে নিচ্ছেন। সততা, পরিশ্রমের মানসিকতা কখনই কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না। রিপোর্টারের বড় গুণ যে এটাই।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বিশেষ রিপোটার্স ভয়েস-এ প্রকাশিত

স্বপ্নের ই-মেইল, আবেগ এবং...

সুইডেনের ছোট্ট একটি শহর কালমার। বাল্টিক সাগরের তীরে ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন এ শহর। মানুষ নেই খুব একটা। ...

সাগরময় ঘোষের সেই সাক্ষাৎ

স্মৃতি রোমন্থনে আছে আলাদা একটা শিহরণ ।  পেছনের দিনগুলো কি কেবলই দীর্ঘশ্বাসের? না। তা নয়। যতো ...

এখনো মনে হয় সেই দিনের ঘটনা

এখনো মনে হয় সেই দিনের ঘটনা। আহ্ কী উত্তেজনাই না ছিলো আমাদের ভেতর। নতুন কিছু করা ...