বিশ্বকাপ এবং সু-অভ্যাস, কুঅভ্যাস
শহিদুল আজম : অভ্যাস বলে কথা । সেটি সুঅভ্যাস হতে পারে। আবার কু-অভ্যাসও হতে পারে। আমাদের মধ্যে বোধ হয় কু-অভ্যাসের প্রভাবটা বেশি। আর সে কারণেই প্রবাদ বাক্য- অভ্যাস যায় না ধুলে…। এর মধ্যে রাজনীতিবিদদের দায় কতটা, সেটি তারাই বলতে পারবেন। সাধারণ মানুষ রাজনীতির যে অভ্যাস সচরাচর দেখে অভ্যস্ত, তাহলো- স্থান, কাল-পাত্র নেই। একজন রাজনীতিবিদ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হেন কোনো কথা নেই যা বলেন না। এতে কার কি প্রতিক্রিয়া হয়, কে মুখ লুকিয়ে হাসেন, এটি কোনো সময়ই তারা ভাবতে চান না। রাজনীতিবিদরাই যেহেতু দেশ পরিচালনা করেন, দেশের নেতৃত্ব দেন; কাজেই তাদের পারস্পরিক অশ্রদ্ধার এ অভ্যাস ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। তাই হয়তো আমরা অন্যের কোন সাফল্যে সহজে আনন্দিত হতে পারি না। অবিশ্বাস,অবজ্ঞা, সন্দেহ, সংশয় থেকেই যায়। এটিই কি দিনে দিনে আমাদের জাতীয় চরিত্র কিংবা অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে- প্রশ্ন ওঠতেই পারে।
তবে, জাপানিরা যে নোংরা কোনো কিছু পছন্দ করে না- এটি একশভাগ সত্যি। এটিই তাদের জন্মগত অভ্যাস এবং জাতীয় চরিত্র। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আরও একবার সেটি তারা মেলে ধরলেন।আইভরিকষ্টের বিপক্ষে এশিয়ার অন্যতম সেরা শক্তি জাপান হেরেছে ১-২ গোলে। হয়তো ব্রাজিল থেকে তারা আর কোনো ম্যাচ না জিতেও দেশে ফিরতে পারে। কিন্ত্ত তাতে কি? প্রথম ম্যাচেই মাঠ ছাপিয়ে আলোচনায় চলে এসেছে জাপানের সমর্থকদের একটি অভ্যাস। আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে, ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের সাথে সাথে সব দর্শক যখন স্টেডিয়াম ছেড়েছে, তখনও জাপানি সমর্থকরা গ্যালারি ছাড়েন নি।দল হারার শোকে তারা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন নি। বরং নিজের সঙ্গে গ্যালারিতে নিয়ে যাওয়া পলিথিনে কুড়িয়েছেন গ্যালারির সব জঞ্জাল। বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই অভিনন্দনের সোনার কাপটা পেয়ে গেছেন জাপানি সমর্থকরা। যদিও এটি নতুন নয়।জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের মানুষ এমনই। যারা সব সময় এ সব দেশ ভ্রমন করেন, তারা সচক্ষেই পরিচ্ছন্নতা কাকে বলে তা দেখেছেন। গেলো ৫টি বিশ্বকাপেই জাপানি সমর্থকদের এ অভ্যাস সবার নজরে কেড়েছে । বিগ স্ক্রিনে রাস্তায় বসে স্টেডিয়ামের আমেজে খেলা দেখতে অভ্যস্ত কোরিয়ানরা। ম্যাচে প্রিয় দল জিতুক কিংবা হারুক, দ্রুতই প্রতিক্রিয়া সামলে নেয়ার ক্ষমতা বোধ হয় সব কোরিয়ানেরই আছে। আর তাই সব সময়ই দেখা যায়, খেলা শেষে নিজেরাই নিজেদের সব কিছু পরিষ্কার করছেন। জাপান কিংবা কোরিয়া কবে বিশ্বকাপ জিতবে এটি প্রশ্নের হলেও তাদের সু-অভ্যাস অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে সারাবিশ্বের কাছে । আর্ন্তজাতিক একটি মিডিয়া জাপানিদের এ খবর জানাতে গিয়ে শুরুটাই করেছে এভাবে- আমরা কি পারি না?
অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হলে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে আমরা বলতাম- আসলেই পারি না। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সহআয়োজক হয়ে ঢাকা শহরকে কতইনা সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কোথায় হারিয়ে গেলো সেই সৌন্দর্য? এবার টি-২০ বিশ্বকাপেও সৌন্দর্য বর্ধনে খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কোথায় গেলো তা ? হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর সিঙ্গাপুরকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার কথা হয়েছিল। এখন সেই হাতির ঝিলের সৌন্দর্যও হারাতে বসেছে। আর বেশি দিন হয়তো নেই, ঢাকা শহরের জঞ্জাল গ্রাস করবে হাতির ঝিলকেও। কারণ একটাই।কু-অভ্যাস। আমাদের লক্ষ্য কেবলই প্রকল্প। একটি শেষ হলে ছুট আরেকটিতে। নতুন প্রকল্পে অনেক টাকা। পুরনোটার পেছনে সময় দিতে চায় কে?
কেবল কু-অভ্যাস যে আমাদেরই, এমনটাও ঠিক নয়। ফুটবলের তীর্থভূমি পেলের ব্রাজিলেও কু-অভ্যাস কম নয়। দীর্ঘ সময় পর আয়োজক হওয়া থেকে শুরু করে ষষ্ঠবারের মতো কাপ জয়ের সুযোগ যখন হাতছানি দিচ্ছে ব্রাজিলের সামনে, তখনও কি সেদেশের অপরাধ কমিয়ে রাখা গেছে? একজন ইতালিয়ান আলোকচিত্রী ব্রাজিলের একটি জেলের যে ছবি দিয়েছেন, সেটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জেলের কোথাও তিল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই- এটি ব্রাজিল ছাড়া আর কোথায় সম্ভব? ইতালিয়ান আলোকচিত্রী তাই হয়তো বলেছেন, এটি জেলখানা নয়ম যেন অপরাধের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ব্রাজিলের পথে ঘাটে রক্তপাত আর হানাহানি পরিসংখ্যান দিয়ে অতিথিদের সতর্ক করার চেষ্ঠা করা হয়েছে, দয়া করে রাস্তায় বেরুনোর সময় গলায় দামী অলঙ্কার পরবেন না। মানিব্যাগেও রাখবেন না বেশি ডলার। এর চেয়েও বড় কথা, যদি ছিনতাইকারীর সামনেই পড়ে যান, প্রতিবাদ করতে যেন যাবেন না। কারণ?
প্রতিবাদ করতে গেলেই মাথা গরম করা ব্রাজিলিয়ানরা আপনার জীবন কেড়ে নিতেও পারেন। ছন্দময় ফুটবল আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সাম্বাও মার খেয়ে যায় এই কু-অভ্যাসের কাছে। এবার বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই সর্বনাশ কিন্ত্ত হয়ে গেছে। একজন আমেরিকান নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন ব্রাজিলে ফুটবল দেখতে এসে। ফুটবলের কারণে সম্ভ্রম হারিয়েছেন আরও এক নারী। তার বাড়ি লাওসে। স্বামী যখন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের উত্তেজনায়, তখন তারই ভাতিজা এই নারীর সর্বনাশ করে পালিয়েছে। বিশ্বকাপ সবাইকে কাছে টানলেও সেই ধর্ষককে টানতে পারেনি। হায়রে কু-অভ্যাস!
১৬-০৬-১৪
ব্রাজিলিয়ানদের ‘আর্জেন্টিনা’, ‘আর্জেন্টিনা’ এবং ম্যারাডোনার হতাশা
- শহিদুল আজম : ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। নেইমার বনাম মেসি । সারা বিশ্বের ফুটবল অনুরাগীরা শেষ ...
এটাইতো বিশ্বকাপ ফুটবল!
- শহিদুল আজম: এটাই হলো বিশ্বকাপ ফুটবল-এক গোলেই থেমে যাবে সব যুদ্ধ! হ্যাঁ, ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার যেন ...
ব্রাজিলের নারী সমর্থকরাই এগিয়ে
- বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই ম্যাক্সিকোর সাথে ড্র করেছে ব্রাজিল। এ ফলাফলকে অঘটন হিসেবেই বিবেচনায় নিতে ...