ব্রাজিলিয়ানদের ‘আর্জেন্টিনা’, ‘আর্জেন্টিনা’ এবং ম্যারাডোনার হতাশা
শহিদুল আজম : ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। নেইমার বনাম মেসি । সারা বিশ্বের ফুটবল অনুরাগীরা শেষ পর্যন্ত এমন লড়াই এ বিশ্বকাপে দেখতে পারবেন কীনা এটি প্রশ্নের নি:সন্দেহেই ।তাই বলে তো আর তর্কের লড়াই থেমে থাকে না। বিশ্বকাপ ফুটবল মাঠে গড়াতে না গড়াতে ব্রাজিল আর আজেন্টিনার সমর্থরা রীতিমতো সম্মুখ সমরে। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরে কোথাও কোথাও তর্কের মাত্রা ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। অথচ বিশ্বকাপ ফুটবলে লড়ছে ৩২টি দল। আরও অনেক দেশের সমর্থক আছে এদেশেও। তর্কের লড়াইটা যেন স্থির ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনায়। বহুমত, বহুদল আর বহু চিন্তার এই দেশে তর্কের বিষয় বরাবরই সীমাবদ্ধ দু’পক্ষে। রাজনৈতিক ময়দানে যখন বিএনপির আর্বিভাব ঘটেনি, তখন যে কোনো অনুষ্ঠান, উৎসবে ঘুরপাক খেতো একটি প্রশ্ন- আপনি মোহামেডান না আবাহনী।কারণ সে সময় রাজনীতির চেয়ে ঢাকার ফুটবলই বেশি সরগরম ছিলো।নান্নু- মঞ্জু দুই ভাইয়ের দুই দলের সমর্থন নিয়ে এলাকায় এলাকায় মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। কে আধুনিক ফুটবলের ধারক, কার পতাকা ঠাঁটারিবাজারে ওড়ে- এমন তর্ক কম উত্তেজনা ছড়ায়নি । খুব মনে পড়ে ছোট বেলায়ই বাবা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, সাবধান! এমন আলোচনায় যাবি না। কেনো? মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়। টেলিভিশনে খেলা দেখলেও তাই জোর গলায় কোনো দলকে সমর্থন জানাতে পারতাম না।আর তর্কতো দুরের কথা। রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘আপনি আওয়ামী লীগ না বিএনপি’ বিতর্ক চলছে অনেক দিন ধরেই। নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে দুদলই পাল্টাপাল্টি ক্ষমতায় গেছে। এরপরও এক দলের সমর্থরা অন্যদলের দোষ ত্রুটি খুজেঁ বেড়ায়। মাঝে রাজনীতিবিদরা বিতর্ক উস্কে দিলেন কে স্বাধীনতার পক্ষে আর কে বিপক্ষে।এখন সব পক্ষ একসঙ্গেই আছে।রাজনৈতিক অঙ্গনে এ প্রশ্নও আছে- আপনি ভারত না পাকিস্তানপন্থী? যে যার অবস্থান দৃঢ় করতে দেখাচ্ছেন নানা যুক্তি।কিন্ত্ত এই তর্কে কার কি আসে যায়।
অনেকেই অবশ্য রসিকতা করে বলতে চান, এ দেশে যখন বিনোদনের বিষয়ের ভীষন অভাব, তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো এমন বিতর্কেও এক ধরণের আনন্দ পাওয়া যায়। দেখুন না, আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের। সব সময়ই তারা কিন্ত্ত অন্যের সহযোগিতা চেয়ে বেড়ান। কিন্ত্ত বক্তৃতার মঞ্চে যখনই তারা দাঁড়ান, তখন একজন অন্যের ওপর মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেন। আবার তাদের এ সব বক্তৃতা নিয়েও বিতর্ক হয়। সেখানেও কেউ কেউ এক ধরণের আনন্দ পান।
বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকরা কেনো ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনায় বিভক্ত- এ নিয়ে গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ আছে। তবে অনেকেই মনে করেন, স্পেনে অনুষ্ঠিত ৮২-এর বিশ্বকাপ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের বিরোধ বাড়িয়েছে। সেবার বিটিভির কল্যাণে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ম্যাচটি দেখার সুযোগ পান এদেশের দর্শকরা । স্রেফ বয়েসের কারণে আর্জেন্টিনার কোচ মিনোত্তি ১৯৭৮-এর বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে অবজ্ঞা করেছিলেন। ৭৮-এ অর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাই পরের চার বছরই ম্যারাডোনাকে বাদ দেয়ার প্রসঙ্গটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ৮২তে ম্যারাডোনার বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হলে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুদে চলে আসেন। কিন্ত্ত ব্রাজিলের সাথে ম্যাচে বাজে ট্যাকলের কারণে ম্যারাডোনা লাল কার্ড পেলে সবার আশা ভঙ্গ হয়। মুলত এটিই ম্যারাডোনার প্রতি প্রেম বাড়িয়ে তুলে।ব্রাজিলের সমর্থকতো আগে থেকেই ছিল। ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার সমর্থক বাড়িয়ে তুলেন। মজার ব্যাপার, অভিষেক বিশ্বকাপে লালকার্ড পেয়েও ম্যারাডোনা নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন। এরপর হাতে গোল দেয়া থেকে শুরু করে মাঠে অনেক কান্ডকীর্তি করলেও ভুল স্বীকারের পথে আর হাঁটেননি। মাঠ আর মাঠের বাইরে ম্যারাডোনার নিপূণ অভিনয়ে এদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকরা বার বার কেঁদেছেন। ম্যারাডোনার জন্যে তারা মামলাও ঠুকেছেন ফিফার বিরুদ্ধে। এ সব ঘটনা ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থনের লড়াইকে জমিয়েছে। কথা হলো, এই দেশে যখন ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থকরা মুখোমুখি তখন স্বাগতিক ব্রাজিলে আর্জেন্টিনা দলের অবস্থা কি?
আর্জেন্টিনার একটি পত্রিকা খবর দিয়েছে, ব্রাজিল পৌঁছানোর পর আর্জেন্টিনার প্রথম অনুশীলন দেখেছেন অন্তত ২৬ হাজার দর্শক। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ব্রাজিলিয়ান। অনেকেই চমকে ওঠতে পারেন, তবে ঘটনা সত্যি- এই ব্রাজিলিয়ানরাই আবার ‘আর্জেন্টিনা’, ‘আর্জেন্টিনা’ বলে সমর্থন যুগিয়েছেন। মেসির সান্নিধ্য পেতে তারা মাঠেও নেমে পড়েছিলেন। কাজেই ব্রাজিল হলেই যে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যেতে হবে, কিংবা আর্জেন্টিনা হলেই ব্রাজিলের বিপক্ষে থাকতে হবে- ব্যাপারটা কিন্ত্ত তা নয়। অন্তত ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি দেখে এমনটি বলাই যায়। তাহলে আমাদের এখানে এতো বিরোধিতা কেনো?
অবশ্য, ম্যারাডোনার কথা বিবেচনায় নিলে ভিন্ন কথা।বিশ্বকাপ দেখতে আর টিভিতে ধারাভাষ্য দিতে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা এখন ফুটবলের পূণ্যভূমি ব্রাজিলে । স্বভাবসুলভভাবে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন শুরুতেই। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচের সাফল্য কামনা করেছেন তিনি। কিন্ত্ত একই সঙ্গে ম্যানেজার কার্লোস বিলার্ডো আর আর্জেন্টিনার ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রধানের মুন্ডপাত করেছেন তিনি। আরও যে কথাটি বলেছেন, তা হলো ব্রাজিলে বসে বিশ্বকাপের কোনো উত্তেজনাই অনুভব করছেন না। তার এ বক্তব্যে ব্রাজিল সমর্থকরা আশাহত হতে পারেন। আর তাতে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকরা বিতর্কে জড়ানোর নয়া উপাত্ত পেতে পারেন- তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।
১২-০৬-২০১৪
বিশ্বকাপ এবং সু-অভ্যাস, কুঅভ্যাস
- শহিদুল আজম : অভ্যাস বলে কথা । সেটি সুঅভ্যাস হতে পারে। আবার কু-অভ্যাসও হতে পারে। আমাদের ...
এটাইতো বিশ্বকাপ ফুটবল!
- শহিদুল আজম: এটাই হলো বিশ্বকাপ ফুটবল-এক গোলেই থেমে যাবে সব যুদ্ধ! হ্যাঁ, ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার যেন ...
ব্রাজিলের নারী সমর্থকরাই এগিয়ে
- বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই ম্যাক্সিকোর সাথে ড্র করেছে ব্রাজিল। এ ফলাফলকে অঘটন হিসেবেই বিবেচনায় নিতে ...