লক্ষ্মী কোথায়

1445516247_lakhkhi kothai.jpg

এক্সিউজ মি...
পথ আগলে দাড়ালো মেয়েটি। ভীষন অবাক শিশির। চোখে ভুল দেখছে না’ তো। অবাক হওয়ার পালা- না সেই মেয়েটিই...। কি চায় সে। কেন পথ আগলে দাড়ালো। বুকের ভেতর হৃদপিন্ডের প্রচন্ড চাপ অনুভব করছে শিশির। যেন ড্রাম পেটাচ্ছে। অনুভব করলো শিশির সে খানিকটা কাপঁছেও।
হ্যাঁ, আমি লক্ষ্মী। এই কলেজের ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। ওই যে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরা যাকে দেখছেন, তিনি আমার ইমিডিয়েট বড় বোন । পড়ে থার্ড ইয়ারে। স্বামী বিদেশে। পাসপোর্ট ভিসা তৈরী। সিগন্যাল এলেই দেবে ছুট। কি বলো আপু তাই না। তার একটা সুন্দর বাচ্চাও আছে। আমি তাকে খুবই পছন্দ করি। সেও তার মায়ের চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসে। ওর বাবা তো বলে, মেয়েকে পালতে আমাকেও নাকি বিদেশে নিয়ে যাবে।
মাথামুন্ড কিছুই বুঝলো না শিশির। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। বুকের ভেতরের আওয়াজটা বাড়তে  লাগলো। শরীরের শিরায় শিরায় দ্রুত রক্ত সঞ্চালন স্পষ্ট টের পেল সে। এই লক্ষ্মী মেয়েটা  কানে আবার বুকের সেই আওয়াজ ঝড় তুলছে না’ তো।
হাসলো লক্ষ্মী। বললো, নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন তাই না। ভাবছেন আমি আবার কোন অপদার্থ আপনার মূল্যবান সময় নস্ট করছি। কিন্তু কি করবো বলুন, আপনার সঙ্গে তো দেখা করার জন্যে সেই কবে থেকেই  মুখিয়ে আছি। যেদিন ক্লাশে আপনার কথা বললেন ওয়াদুদ স্যার, সেদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি। জানেন আজ বিদায়ী ছাত্রদের পক্ষ থেকে যদি আপনি বক্তৃতা না দিতেন তাহলে বোধ হয় আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার সাধ আপনার অপূর্ণই থেকে যেতো।
বাক শক্তি যেন হারিয়ে ফেললো শিশির। গলার স্বরেও লক্ষ্য করলো কাপুঁনি। এমনিতেই মার্চ মাসের প্রচন্ড গরম। শিশির লক্ষ্য করলো তার শরীর ভিজে যাচ্ছে ঘামে। আমতা আমতা করেই বললো, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে অপেক্ষা! কোন মেয়ে তো আমার সঙ্গে কথা বলে না...।
ভালোই হলো- বললো লক্ষী। আপনি শুধু আমার সঙ্গেই না হয় কথা বলবেন।
হ্যাঁ, বলবো বোকার মতোই মাথা ঝাঁকালো সে।
 না, এখানে নয়। আপনি আমার বাসায় আসবেন। অনেক কথা জমা হয়ে আছে। বলতে না পারলে যে দম বন্ধ হয়ে আমি মারা যাবো।
জবাব দিতে পারলো না শিশির। তার আগেই কমনরুম থেকে ডাক পড়লো- ওই শিশির ওখানে কি করছিস, ফারুক স্যার তোকে ডাকছে। তাড়াতাড়ি আয়।
জোর করেই হাসলো শিশির। দেখলে তো, আমাকে যেতে হবে।
হাসলো লক্ষ্মীও- ব্যস্ত মানুষ তো, ডাকবেই তো। কথা হবে, অনেক কথা। ভুলবেন না যেন। দোতলার কড়িডোর দিয়েই হাটতে শুরু করলো লক্ষ্মী। দুরে দাড়ানো তার থার্ড ইয়ারে পড়–য়া বোনও যুক্ত হলো তার সঙ্গে। শিশিরের ভীষন ইচ্ছে হলো পেছন ফিরে লক্ষ্মীর চলে যাওয়া দেখা। কিন্তু সাহস হলো না। আজ যেন সাহসের স্পর্ধাটা একেবারেই শুণ্য হয়ে গেছে।

*****************************************

অনেক রাত। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। রাস্তাও নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে দু’একটি ট্রাক আর স্কুটার শো শো শব্দে করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। ঘুম নেই শিশিরের চোখে ।রাতের নির্জনতা ভারী পছন্দ তার। টেবিল ল্যাম্পের আলো আধারিতে কত কিছু কল্পনা করা যায়। ভাবা যায়। একা কাঁদা যায়। হাসাও যায়। কেবল শব্দ করে হাসা যায় না। কিন্তু কেদে চোখ ভাসিয়ে ফেলা যায়। এই খানেই বোধ হয় হাসি আর কান্নার মধ্যে পার্থক্য। কিন্তু আজ কি হলো, দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না শিশির। বার বারই সামনে এসে দাড়াঁচ্ছে লক্ষ্মী। কে সে? কি বলতে চায়? কেন সে অপেক্ষা করলো? আসলে লক্ষ্মীকে বলার অনেক কথা ছিল তার। লক্ষ্মীর সঙ্গে কি তার কোনও টেলিপ্যাথি কাজ করছে? না, সেটাই বা হবে কিভাবে। ঘনিষ্ট কেউ হলেই না টেলিপ্যাথির সম্পর্ক।
শিশির তার স্মৃতির অ্যালবাম হাতড়াতে শুরু করলো। কবে যেন লক্ষ্মীকে প্রথম দেখেছে?
মাস আটেক তো হবেই। তেজগাঁও কলেজের সিস্টেমটাই আলাদা, বিশেষ করে সায়েন্সের ছাত্রদের জন্যে। সপ্তাহে একদিন শুধুই প্র্যাকটিকেল। মনে পড়ছে ফিজিক্স ল্যাবরেটরির সামনেই প্রথম দেখেছিল লক্ষ্মীকে। প্রথম দেখায় দারুন কৌতুহলী হয়েছিল সে। শাদা সালোয়ার আর কামিজ পরা। গলায় উড়না পেচাঁনো। চুলগুলো একবারেই ছোট। কিন্তু চোখ দুটো অদ্ভুত সুন্দর। শিশির যখন ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে ঢুকছিল, তখনই বেরুচ্ছিলো লক্ষ্মী। শিশিরের আবিষ্কার করতে একটু কস্ট হয় নি মেয়েটি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কারণ শিশিরদের প্র্যাকটিক্যাল ছিল দুপুরে।
প্রথমদেখায় লক্ষ্মীর সব সৌন্দর্য শিশিরের হৃদয় ক্যামেরায় ক্লিক করেছিল। আবেগ সামলাতে পারে নি। বন্ধু শহীদকে বলেছিল, মেয়েটি কে জানিস? বন্ধুত্ব করবো।
শহীদ চিৎকার করেই হেসেছিল।
অবাক হয়েছিল শিশির- হাসার কি হলো? বন্ধুত্ব করা কি অন্যায়।
কোন উত্তর দেয়নি শহীদ। কেবল শিশিরবেক টেনে দৌড়েই  নিয়ে গেছে ফার্মগেটের সামনের সেই পার্ক পর্যন্ত।
অবাক হয়েছে শিশির। আরে কি করছিস?
হাফাঁতে হাফাঁতেই শহীদ আঙ্গুল তাক করেছিল পার্কের দিকে। এরপরও কি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগ্রহ তোর আছে?
মাথা ঝাকালো শিশির- না’ রে। চল যাই। আমি তো আর বাংলা সিনেমার নায়ক নই যে কলেজের মাস্তান ছেলেদের ইচ্ছেমতো শায়েস্তা করে ওকে ছিনিয়ে আনবো।
হাসলো শহীদ। আমারও ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ভীষন ইচ্ছে হয়েছিল। একদিন ওর বাড়ি যাবার পথে দাড়িয়েও ছিলাম অনেকক্ষন। যেই না কথা বলতে যাবো, দেখলাম আজাদদের গ্র“প রাস্তায়। বললো, সাবধান এদিকে চোখ দিবিনা। খামোখা মারপিটে যাবো কেন।
ভীষন কস্ট পেয়েছিল শিশির। কিন্তু আর সামনে বাড়ে নি। শত হলেও তো জানের মায়া আছে। তাছাড়া কলেজে তার একটা নাম-দাম আছে। কোন মেয়েকে নিয়ে কেন সে কেলেঙ্কারিতে জড়াবে। প্রতি রোববারই লক্ষ্মীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছে ল্যাব-এর সামনে। বুকের ইচ্ছেটাকে সে বুকেই চেপে রেখেছে। কোনদিন তার নামও জানতে চায় নি। আজ সে-ই কী না নিজেই ধরা দিল। থ্যাঙ্কু ওয়াদুদ স্যার।ভাগ্যিস তিনি ক্লাশে তার নাম বলেছিলেন। কিন্তু কি বলবে লক্ষ্মী? সে কি প্রেম নিবেদন করবে? পুরো কলেজের সবাই যার পেছনে ঘুরে, তার আবার খুজে খুজে প্রেম করার দরকার কি। তাছাড়া বড়বোনকে সঙ্গে নিয়ে কেউ নিশ্চয় প্রেমিকা খুজঁতে বেরোয় না। আসলে শিশির কলেজের ছোটখাটো একটা বিখ্যাত। ক’ দিন আগে প্রেসিডেন্ট তাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বাড়িতে। তার ক্ষুদে মস্তিস্কের এক গবেষণায় প্রেসিডেন্ট অভিনন্দন জানিয়েছেন। পত্রিকায় ফলাও করে সে খবর ছাপা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের জন্যে এমন খবর কম গৌরবের নয়। পত্রিকায় ছাপা হওয়া এই খবরের কাটিং ছেলে এবং মেয়েদের কমনরুমে টাঙ্গানো হয়েছে। তিনদিন আগে হাসতে হাসতেই বলেছে লাভলী, সবাই চেষ্ঠা করেও কমনরুমের সেই পেপার কাটিং দেওয়াল থেকে তুলতে পারে নি।
শিশিরের ভাবনায় বার বারই ভেসে উঠছে ওই একটি মেয়ের চেহারা। আসলেই কি সত্য, সে ছয়মাস অপেক্ষা করেছে শিশিরের সঙ্গে দেখা করার জন্যে? বুকের ভেতর চিন চিন এক ব্যথা অনুভব করলো শিশির। অন্যরকম এক শিহরণও অনুভব করলো। ভারী মজার এ শিহরণ। শিশির যেন শুয়ে আছে এক সবুজ প্রান্তরে। নরম ঘাসগুলো বাতাসে উড়ছে। বিস্তীর্ণ নীল আকাশ চোখের সামনে। দু একটা ধবধবে শাদা মেঘ তুলার মতো করে উড়ে যাচ্ছে। সেই আকাশ ফুরেই পরীর বেশে মেঘের সঙ্গে মিতালী করছে লক্ষ্মী। ডাকছে শিশিরকে- আসুন না হারিয়ে যাই।



আজ সকাল ন’টাও শিশিরের রুমের দরজা বন্ধ। সকাল ছ’টায় ঘুম থেকে উঠার দীর্ঘ অভ্যাস। সাড়ে সাতটায় ক্লাশ। কাল শেষ হয়ে গেছে। চার মাস পর পরীক্ষা। কলেজে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কেবল পরীক্ষার আগে এডমিট কার্ড নিয়ে এলেই হলো। কাল বিদায়ী অনুষ্ঠানে সব স্যারই বলেছেন, মাঝের সময়টা যেন নস্ট না হয়। পড়তে হবে। নইলে পরীক্ষার ফল খারাপ নির্ঘ্যাৎ। তবে বাড়িতে বাবা ছুটি দিয়েছেন একদিন। বলেছেন, অনেক ঝক্কি গেছে। একদিন ফুল রেস্ট নিয়ে শুরু কর কঠিন সংগ্রাম। সকালে মা শিশিরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বাবা দেন নি। বলেছেন, আজ ও নিজ থেকে না উঠলো ডেকোনা।
ভীষন ঘুম কাতুরে শিশির। দরজা জানালা বন্ধ করে পর্দা দিয়ে ঘর ঢেকে দিলে মরা মানুষের মতো ঘুমাতে পারে সে। একবার এমন এক কান্ড হয়েছিল,মনে হলেই শিশির হাসে। সকালে ঠিক সময়মতো ঘুম থেকে না উঠায় ভীষণ রাগ করেছিলেন শিশিরের বাবা। তার মাকে ডেকে  বলেছিলেন, শোন, আজ শিশিরকে আর ডাকবে না। আমি আসলে দেখতে চাই ও কত ঘুমাতে পারে। প্রতিদিন সকালে উঠা নিয়ে হই চই করতে আমার একটু ভালো লাগে না। ওর রুম অন্ধ কার করে রাখো। দেখো কতক্ষন ঘুমাতে পারে। ক্ষুধা লাগলে তো সে উঠবেই। বাবা সকালেই অফিসে যান। বিকালে অফিস শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন শিশির ঘুমাচ্ছে। রাতেও তাই। শিশিরের এখনও মনে পড়ে গভীর রাতে তার ঘুম ভেঙেছিলো ক্ষধায়। কিন্তু খাবার পায় নি সে। বাড়ির সবাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। পেটের ক্ষিদেয় অসহ্য যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তাকে। সেই ঘুমের কথা মনে হলে এখনও ভীষন হাসি পায় শিশিরের। আপন মনেই সে হাসে।
আজ অবশ্য সে অবস্থা হয় নি। ন’টায় ঘুম ভেঙে যায় শিশিরের। সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত- আজ কলেজে যাবে। তার কোন ক্লাস নেই কিন্তু লক্ষ্মীর তো আছে। যদি তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আবার বুকের ভেতর একটা ভয়ও কাজ করে। আজও কি মাস্তান প্রকৃতির ওই ছেলেগুলো থাকবে?
বেলা এগারোটার আগেই কলেজ ক্যাম্পাসে র্পৌছে যায় শিশির। সঙ্গে শহীদ। সবে মাত্র ছুটির ঘন্টা বেজেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা বেরুচ্ছে। আজ কলেজের গেইটের সামনেই শিশিরদের আড্ডা। ক্লাস শেষ। ক্লাসে যাওয়ার পারমিশন নেই।
এই যে স্যার, এখানে কি করছেন- পেছন থেকে লক্ষ্মীর শব্দে হোচঁট খেলো শিশির। খানিকটা অপ্রস্তুতও হলো। লক্ষ্মীর খোজে সে ক্লাসরুমের দিকে পলকহীন তাকিয়েছিল। কে জানতো সে বাইরে থেকে চমকে দেবে।
আমি চলে যাচ্ছিলাম বাসায়। পার্কের কাছে যেতেই কেন জানি মনে হলো আজ আপনি আসবেন। তাই দেখা করার সুযোগ নস্ট করলাম না। আচ্ছা আপনি আমাদের বাড়িতে আসবেন তো- বললো লক্ষ্মী।
মাথা ঝাকাঁলো শিশির। জোর করে ব্যস্ততার ভান করলো।
লক্ষ্মী বললো, আসবেন না কচু। আপনি কি আমাদের বাসার ঠিকানা জানেন? কাল যখন বললাম বাসায় আসতে কই আপনি তো ঠিকানা জানতে চাইলেন না।
 আসলেই তো। ভুল হয়ে গেছে। বাসাটা কোথায়।
লিখুন। কাগজ আছে না দিতে হবে।
না আছে।
লক্ষ্মী বললো, এই পার্কের ঠিক ওপারে। মনিপুরী পাড়া। সত্যি আপনি আসবেন তো। তাড়াতাড়ি কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
চলে গেলো লক্ষ্মী।



সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললো শিশির। লক্ষ্মীদের বাসায় সে যাবেই। শহীদ ওর বাসা চেনে। কথা দিয়েছে এগিয়ে দিবে।তবে বাসায় যাবে না। কারণ লক্ষ্মীকে অনুসরন করে একদিন তার বাসায় যেতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে বাড়ির লোকজনের কাছে।
শিশিরও বলেছিল, না না। তাহলে যাওয়ার দরকার নেই। দুর থেকে বাড়ি চিনিয়ে দিলেই হবে। জোর করেই আরও দুটা দিন পার করলো শিশির। কিন্তু মন যে আর মানে না। কলেজের সাংস্কৃতিক ক্লাব থেকে ডাক এলো- স্যার ডেকেছেন। শিশির তো মহাখুশি। আজও নিশ্চয় দেখা হবে লক্ষ্মীর সঙ্গে। স্যারের আগেই লক্ষ্মীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল লক্ষ্মীর। কি ব্যাপার বলুন তো, আপনি কি আমার বাসায় আসবেন না? বেশ, না আসলে বলে দিন। আপনি কেন আপনার জন্যে অপেক্ষায় থাকবো।
শিশির বললো, সত্যি বলছি আমি আসবো।
লক্ষ্মী বললো , আমি অতো কিছু বুঝি না আজই আসতে হবে আপনাকে। তা না হলে এইখানেই শেষ। আর রিকোয়েস্ট করবো না।
আমতা আমতা করলো শিশির, আজ যে স্যারের সঙ্গে...
অসুবিধা কি, যখন ফ্রি হবেন..। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
স্যার যখন ছাড়লেন তখন ভর দুপুর। এই সময় কোন ভদ্রলোক কারো বাড়িতে যায় না। অথচ শিশিরকে যেতে হবে। নইলে আজই লক্ষ্মীর সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ।
শহীদ সঙ্গী হলো শিশিরের। মনিপুরী পাড়া মসজিদের সামনে যেতেই সে রিকশা থামালো। তারপর আঙুল দিয়ে দেখালো, ওই যে বড়িটা এর নীচতলার কলিং বেল টিপবি..বলেই  ভো দৌড়।



লজ্জা, ভয়ে কাচুমাচু শিশির। লক্ষ্মীর কোন খবরই তো নেওয়া হয় নি। বড় বোনের কথা সে বলেছে। বাড়িতে কে থাকে। তারা কেমন। কোন ভাই টাই নেই তো। শিশিরকে কেউ অপমান করে আবার তাড়িয়ে দেবে না’ তো। সিনেমায়ও বড় কিংবা সমসাময়িক ভাইরা বোনের ছেলে বন্ধু পছন্দ করেনা । বাস্তবতা তো আরও কঠিন। বুকে ফু দিয়েই শিশির কলিং বেল-এ চাপ দিলো। তার আগেই খুলে গেলো দরজা। লক্ষ্মীর মতোই সুন্দরী দাড়িয়ে। বোঝাই যায় লক্ষ্মীর বোন। ছোট না বড়?
আমি সেতু। ভেতরে আসুন।
আমি শিশির। ও আসতে বলেছিল.....।
আমি সবই জানি। ও আপনার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে এইমাত্র ঘুমিয়েছে। ভেতরে আসুন ওকে ডেকে দিচ্ছি।
বাসার মুল দরজা লাগোয়া ড্রয়িংরুম। শিশির সেদিকেই যাচ্ছিলো। সেতু পথ ঘুরিয়ে দিল-উহু, ওই দিকে। একেবারেই বেডরুমে। ঘুমের লাল চোখ দিয়ে দাড়িয়ে লক্ষ্মী।
যাক, আপনার সময় হলো। আমি কি যে খুশি হয়েছি আপনাকে বোঝাতে পারবো না। তা জনাব দুপুরে পেটে কিছু পড়েছো তো? সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যারা করে তারা তো আবার ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা।
আমি আলাদা। পেটপুজো করেই যা করার করি।
লক্ষ্মী হাসছে দাতঁ বের করে। হাসলে ওকে আরও সুন্দর লাগে।
আজ কিন্তু আমার সন্দেহ ছিল না। আমি জানতাম আপনি আসবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থেকে ঘুমাতে গেছি। জানেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি স্বপ্ন দেখছিলাম?
না’ তো।
আপনাকে।
স্বপ্নের বিষয়বস্তু কি জানতে পারি।
না, তা বলবো না। তবে মজার। ভীষণ মজার। স্বপ্নে গিয়ে কি লাভ, এখনতো বাস্তবেই আছি। জানেন আমি খুবই ক্র্যাজি। আমি যা চাই, সেটা আদায় করার আগ পযর্ন্ত আমার মাথায় রক্ত উঠে থাকে।
আমার কাছে কি চাও লক্ষ্মী?
হাসি থেমে যায় লক্ষ্মীর। চোখ দুটো স্থির হয় শিশিরের চোখে। এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে থাকে। পলকও পড়েনা। দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে থাকে। তারপর হঠাৎ করেই বলে উঠে-
তোমাকে। আই লাভ ইউ শিশির! রিয়েলি আই লাভ ইউ। আমার বাসার সবাই জানে। আমি তোমাকে একান্তে চাই। আমার মতো করে।
প্রচন্ড একটা ভুমিকম্পে কেপেঁ উঠে শিশির। মাথা তার ঘুরতে থাকে।
তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো তাই না। ভাবছো আমি মজা করছি। আসলে তা নয়। এটা সত্যি। কথা দাও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না? তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না তোমাকে দেখার ইচ্ছে না হলে আমি এই কলেজ অনেক আগে ছেড়ে দিতাম। তুমি জানো না কলেজের মাস্তান প্রকৃতির ছেলেগুলো কিভাবে আমার পিছু নিয়েছে। একদিনও তারা আমার পিছ ছাড়ে না। প্রথম প্রথম প্রায় প্রতিদিনই বাসায় ফিরে আমি কেঁদেছি। সবাই সান্তনা দিয়েছে। বুঝিয়েছে। একদিন বোটানি ক্লাসে হঠাৎ কি প্রসঙ্গে স্যার তোমার কথা বললো। বললো, আমাদের কলেজের গৌরব, অহঙ্কার। যাকে প্রেসিডেন্ট ডেকে নিয়ে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। এরপর দিনই দেখলাম তোমার ছবিসহ পেপারের একটি কাটিং আমাদের কমনরুমে টাঙ্গানো। অনেকেই ওই কাটিং নস্ট করে ফেলতে চেয়েছে। আমি দেই নি। ওয়াদুদ স্যারের কথার পর থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, তোমাকেই আমার চাই। কেন? এই প্রশ্ন তুমি করো না। এর উত্তর আমার জানা নেই। আমি শুধু ভাবতে চাই তুমি একান্তই আমার। আমি যেভাবে ভাবি, তুমিও সেভাবে ভাববে। আমি তোমার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবো । তুমি হবে আমার অনুপ্রেরণা। কি রাজি?
এক ঝটকায় শিশিরের হাত ধরে ফেললো লক্ষ্মী। শিশির তখনও বাকশক্তিহীন। আকস্মিকতায় হতবাক সে। লক্ষ্মী কি তাকে বাজিয়ে দেখছে। মেয়েটার মাথা ঠিক আছে তো? শিশির ভুলে গেছে সেও তো লক্ষ্মীকে পেতে চেয়েছিল। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু পারে নি। এই মুহূর্তে এটা বলা কি ঠিক হবে?
লক্ষ্মী বললো, আজ কিন্তু তোমাকে আমি ছাড়ছি না। তুমি একটু বসো আমি বাসার সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। একে একে মা, বোন, ভাগ্নি সবার সঙ্গে শিশিরের পরিচয় করিয়ে দিল লক্ষ্মী। এই প্রথম জানালো, তার বাবা নেই। বাড়ির বেশিরভাগ সদস্য মেয়ে। একমাত্র ভাইটি একটি বিদেশী ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করেন। শিশিরকে পেয়ে সবাই দারুণভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো। যেন তার সঙ্গে তাদের অনেক দিনের পরিচয়। লক্ষ্মী বললো, চলো না সংসদভবনের সবুজ প্রান্তরে যাই। কতদিন ইচ্ছে হয়েছে ওই বখাটেদের জন্যে যেতে পারি না। কলেজে তারা রয়ে সয়ে আমার সঙ্গে আচরণ করে। কিন্তু সংসদভবনের ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীন। ভালো হলো, আজ তুমি আছো। ওদের ভুল ভাঙ্গবে।
দ্রুতই ঘটে যাচ্ছে সব কিছু। শিশিরের সব চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না আসলেই কি চাইছে লক্ষ্মী। গতিতে তো আবেগ থাকে না। লক্ষ্মীকে শিশিরও কাছে চায়। অনেক কাছে। তার হৃদপিন্ডের সেই শব্দ কান পেতে শুনতে চায়। তুলোর মতো উড়ে যাওয়া মেঘের মতোই তাকে নিয়ে উড়তে চায় স্বপ্নে সোনালী রাজ্যে। চিৎকার করে জানান দিতে চায়, হে বিশ্ববাসী তোমরা দেখো, আমি আমার প্রিয়তমাকে কাছে পেয়েছি। যাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসেছিলাম। সেই ভালোবাসার সাড়া পেয়েছি। কিন্তু এতো দ্রুত কেন?
ঝটপট তৈরী হয়ে এলো লক্ষ্মী। চলো- বললো সে।
মনিপুরী পাড়ার সামনের রাস্তা টপকালেই সংসদ ভবনের বিস্তীর্ণ সবুজ চত্বর। হাজার হাজার মানুষ চার দিকে। ভীষণ লজ্জাই পেলো শিশির- না জানি কার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। মনে মনে আশা করলো কলেজের দুএকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে মন্দ কি। তারা তো জানবে কলেজের সেরা সুন্দরি এখন তার বাহুডোরে। কেবল ওই বখাটের পাল্লায় না পড়লেই নয়।
তোমার প্রিয় গান কি?
লক্ষ্মীর প্রশ্নে চিন্তায় ছেদ পড়লো শিশিরের।
অনেক গানই তো প্রিয়। কাল থেকে আরেকটি গানের প্রেমে পড়েছি। টিভিতে শুনলাম নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর জীবনান্দ হয়ে... কি জানি গানটি।
চিমটি। এটা আমারও পছন্দ। শোন দেখি আমার গলায় কেমন লাগে-
জীবনান্দ হয়ে সংসারে আজো আমি....
লক্ষ্মী খালি গলায় চিৎকার করেই গাইলো। বললো, আজ আমার পাগল হয়ে যেতে হচ্ছে করছে।
ঝাউগাছ ঘেরা চত্বরেই পাশাপাশি বসলো শিশির-লক্ষ্মী। অনেক কথা হলো। শিশিরের কোন কিছুই আর গোপন রইলো না। কিভাবে লক্ষ্মীর প্রেমে পড়েছিল, কিভাবে ব্রেক কষেছিল-সবই বললো। দু’জন খুশিতে আর আনন্দে গড়াগড়ি খেলো। একদিনে এক ঘন্টায় তাড়াতাড়ি কাছে চলে এলো। অনেক কাছে।
লক্ষ্মীই থামিয়ে দিল, এই সূর্য ডুবছে। বাড়ি যাবে না?
লক্ষ্মীর কোলে মাথা রেখে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগে মগ্ন শিশিরের ধ্যান ভঙ্গ হলো। বললো, না। যেতে ইচ্ছে করছে না। আজ সূর্যটাকে একটু টেনে পৃথিবীতে রেখে দেওয়া যায় না।
শিশির উঠে দাড়ালো। লক্ষ্মীও উঠে দাড়ালো। দু ’জনের দুই বাহু চুম্বকের আকর্ষণে। সংসদভবনের মাঠে দাড়ালেই দেখা যায় লক্ষ্মীদের বাড়ি। লক্ষ্মী বললো, আমাকে বাড়ি পৌছে দিতে হবে।



সারাদিন যেখানেই কাটুক, বিশেষ কোন প্রয়োজন না পড়লে মাগরিবের পর শিশির বাড়ির বাইরে থাকে না। আজ ব্যতিক্রম। সেই সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছে। মা নিশ্চয় চিন্তা করছে। বাসায় একটা ফোন করলে ভালোই হতো। থাক, এখন আর করে কি হবে। তাড়াতাড়ি ফিরলেই হয়। লক্ষ্মী আজকের দিনটা যুগ যুগ ধরে মনে থাকবে। খুব কম মানুষের জীবনে বোধ হয় এমন মুহূর্ত আসে। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান।
শিশিরের নাক টেনে ধরলো লক্ষ্মী- আমিও। আরেকটি কথা, কাল থেকে তুমি আর কলেজে আসবে না। প্রমিজ?
প্রমিজ।
আমি চাই না এই মুহূর্তে তোমার আমার ব্যাপারটা কেউ জানুক। আজ যারা দেখেছে,তারাই প্রচার করুক। তুমি ভালো করে পড়ো। পরীক্ষায় তোমাকে ভালো করতে হবে। ভাববে আমি তোমার পথ চেয়ে আছি। আমার কথা ভেবেই তুমি পড়বে। ঠিক আছে?
লক্ষ্মী থামলো না, আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। কেউ দুরে থাকলে তাকে অনুভব করি। তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে তোমার শেষ পরীক্ষার দিন বিকালে। মনে থাকবে? এর আগে কিন্তু তুমি ঘুনাক্ষরে আসবে না। আমি ততদিন পর্যন্ত তোমাকে ভাববো। তোমাকে নিয়ে কল্পনার সাগরে হাবুডুবু খাবো। তারপর মেলাবো।
কিছু বলতে চেয়েছিল শিশির। লক্ষ্মীর নরম ঠোঁট জোরা শিশিরকে কিছু বলতে দেয় নি।



আজ সকাল থেকেই অন্যরকম শিশির। পরীক্ষার ধকল শেষ হতে চলেছে। আজই শেষ পরীক্ষা তার। এরচেয়েও বড় কথা পরীক্ষা শেষে দেখা হবে লক্ষ্মীর সঙ্গে। কখন দেখা করবে সে? পরীক্ষার পর পরই? না বাসায় এসে বিকালে যাবে। আজ তাড়া নেই। দেরী করে বাড়ি ফিরলেও কেউ কথা বলবেন না। শিশির সিদ্ধান্ত নেয়, পরীক্ষা দিয়েই সে ছুটে যাবে মনিপুরী পাড়ায়। প্রথম এ বাড়িতে এসেছিল, ঠিক সে সময়েই যাবে। সারপ্রাইজ দেবে। তাছাড়া সকালেই সে মাকে বলে এসেছে।
অন্যরকম পরীক্ষা দিয়েছে আজ শিশির। পুরো প্রশ্নই কমন। কলমও চালিয়েছে সমানে। আট বার রিভিশন দেওয়ার পরও সময় শেষ হয় নি। খাতা জমা দিয়েই সে ছুট। স্কুটার নিয়েই সোজা মনিপুরী পাড়া। ছিঃ ছিঃ ভুল হয়ে গেছে, এতদিন পর এ বাসায়, লক্ষ্মীর জন্যে কিছু একটা হাতে নিয়ে আসা উচিঃ ছিল। নিদেন পক্ষে একটা ফুল। ওইতো বাগানে ফুটে আছে একটা বিশাল লাল গোলাপ। চুরি করবে না’ কি! ভর দুপুর। ঘুমাচ্ছে সবাই। এখন আর ফুলচুরির জন্যে বড় শাস্তি হবে না। শিশির গোলাপটি পকেটে ভরে রাখলো। মনে মনে রিহার্সাল দিলো, লক্ষ্মী যদি দরজাটা খুলে তাহলে ফুল দিয়েই তাকে সারপ্রাইজ দেবে। নিশ্চয় লক্ষ্মীও তার মতোই অপেক্ষায় আছে। না।খামোখা ভাবনা। সময় নস্ট।
কলিংবেলে হাত দিলো শিশির। ভারী মিষ্টি বাজনা। যে লাগিয়েছে তার নিশ্চয়ই রুচি আছে। লক্ষ্মীর পছন্দও হতে পারে।
ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই। একবার দু’বার তিনবার।
এবার ভেতর থেকে কর্কশ শব্দ ভেসে এলো- কি রে লোকমান,  দেখতো দুপুর বেলা কে ডিস্টার্ব করতাছে? ফকির হইলে কইষা একটা ধমক লাগাবি।
মনে মনে প্রমাদ গুনলো শিশির। এমন কন্ঠ তো আগের বার শুণে নি।
দরজা খুলে গেলো। একুশ বাইশ বছর বয়েসী এক যুবক দাড়িয়ে- কারে চান?
বাসায় কি লক্ষ্মী আছে?
লক্ষ্মী?
না। এই নামে এই বাসায় কেউ থাহে না।
বাড়িতে আর কেউ নাই?
মাঝ বয়েসী এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসেন দরজার কাছে। সর তো লোকমান। না। লক্ষ্মীরা এই বাসায় থাকে না। তিনমাস আগে তার মা মারা যাওয়ার পর তার বড় বোনের সঙ্গেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
বলতে পারেন- কোথায় গেছে?
না, বাবা । আমি জানিনা।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শিশির। দরজা ছেড়ে চলে এলো সে রাস্তায়। কলেজে খোজ নিলো, মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে লক্ষ্মী। কোথায় সে- কেউ জানেনা। লক্ষ্মীর খোজেঁ প্রতিদিনই কলেজে যায় শিশির। মাথায় ছোট চুল আর গলায় উড়না পেচানো কাউকে দেখলেই সে কাছে ছুটে যায়। একজোড়া মায়াবী চোখের খোজ করে। পরক্ষণেই হতাশ হয়ে যায়। রাতে নীরবে কাদেঁ। বুকের ভেতর আরেকটি স্বত্তা চিৎকার করে উঠে- লক্ষ্মী কোথায়? আমি তাকে খুজি......। #

ভালবাসার ক্রাচ

অ্যাই শুনছিস!হু।হু না। সিরিয়াসলি....।তোর কোন্্ কথাটি আমি সিরিয়াসভাবে শুনি না বল মিথিলা।তুই তো আমারজান।ফাজলামি রাখ। আমি ...

রুবির আদর্শলিপি পাঠ

ট্রিং....টুং... টাং....বসের রুমের কলিংবেলটি বেজে উঠলেই রুবির বুকে ধরফরানি শুরু হয়। তার চোখ চলে যায় ইদ্রিসের ...