এখনো মনে হয় সেই দিনের ঘটনা
শহিদুল আজম: এখনো মনে হয় সেই দিনের ঘটনা। আহ্ কী উত্তেজনাই না ছিলো আমাদের ভেতর। নতুন কিছু করা কিংবা ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ সবসময় সবার হয় না। নিঃসন্দেহেই সৌভাগ্যবান আমরা। আর তাই দারুণভাবে শিহরিত হয়েছি। মনে টেনশনও কাজ করেছিলো ট্যাবলয়েড দৈনিক পাঠক গ্রহণ করবেন তো? অনিশ্চয়তা কিংবা শঙ্কার সুষ্পষ্ট কারণও ছিলো। এক সময় এদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানা। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তার রাজকীয় বিয়ের দৃশ্যটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের কল্যাণে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কম-বেশি সবাই। এরপর থেকেই ডায়ানার আলাদা একটা অবস্থানই গড়ে উঠেছিলো এ দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে। আর সেই ডায়ানাই প্রেমিকসহ মারা গেলেন দুর্ঘটনায়, তাও পাপারাজ্জিদের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে।
ডায়ানার আকস্মিক মৃত্যু শোকগ্রস্ত করে সবাইকেই। আর তখনই আলোচনায় সামনে চলে আসে পাপারাজ্জিরা। এমনিতেই তাদের কীর্তিকলাপ সবসময়ই আলোচিত। কিন্তু ডায়ানার মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে পাপারাজ্জিদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো পাপারাজ্জিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ডায়ানার মৃত্যুর পর তারাই পাপারাজ্জিদের গোষ্ঠী উদ্ধারে সোচ্চার হয়। তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয় ট্যাবলয়েড মানেই বোধ হয় পাপারাজ্জিদের কাণ্ড-কীর্তি। ব্রডশিট পত্রিকা দেখেই অভ্যস্ত দেশের পাঠক সমাজ। ঠিক সে অবস্থায় বাংলাভাষায় প্রথম রঙিন ট্যাবলয়েড দৈনিক প্রকাশ কম চ্যালেঞ্জিং ছিলো না। কিন্তু এর স্বপ্নদ্রষ্টা মতিউর রহমান চৌধুরী, আমাদের প্রিয় মতি ভাই। সাংবাদিক হিসেবে আগাগোড়াই যিনি ঝুঁকিটা দারুণভাবে উপভোগ করেন, তিনি কোনো অনিশ্চয়তাকেই আমলে নিলেন না। অবশ্য নেয়ার সুযোগও ছিলো না। আমাদের যে টীমটি মানবজমিন-এর প্রথম প্রকাশে যুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিলো, সেটি ছিলো পরীক্ষিত। মতি ভাইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কঠোর অনুশীলন করেছি বাংলাবাজার পত্রিকায়। মতি ভাই ওই পত্রিকারও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে বকেয়া বেতন নিয়ে আন্দোলন হয় বাংলাবাজার পত্রিকায়। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ বিপরীত পথে হাঁটতে গিয়ে একটি বড় ভুল করে বসে। সম্পাদককে না জানিয়েই আন্দোলনকারী ৭ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করে। এ নিয়ে বাংলাবাজার পত্রিকা অফিস উত্তপ্ত হয়। জোরালো প্রতিবাদ করেন বাংলাবাজার পত্রিকার সে সময়ের সম্পাদক মতি ভাইও। মালিক কর্তৃপক্ষকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা অবস্থান পাল্টান নি। তাই মতি ভাই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি এ খবর আমাদের জানাতে না জানাতেই সে সময়ের বার্তা সম্পাদক মরহুম আহমেদ ফারুক হাসানও মতি ভাইয়ের পথ অনুসরণ করেন। আমি ছিলাম বাংলাবাজার পত্রিকার চীফ রিপোর্টার। ফারুক ভাইয়ের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম আমিও। ব্যস্! বাংলাবাজারে পাঠ চুকে গেলো আমাদের। একদিন পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ থাকলো। পরদিনের পত্রিকায় এটিও শিরোণাম হলো। বলা হলো এমন ঘটনা আর কখনই ঘটে নি। মতি ভাইয়ের নেতৃত্বে যখন তেজগাঁওয়ের কসকো ভবন ছেড়ে চলে এলাম রাস্তায়, দেখলাম আমাদের পেছনে শতাধিক সংবাদকর্মী। জোরালো ভাষায় তাদেরও ঘোষণাÑ আমরাও ফিরবো না।
এরপর সময় গড়ালো। মতি ভাইকে এক পর্যায়ে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিলো বাংলাবাজার পত্রিকার মালিক কর্তৃপক্ষ। বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মীকে বাইরে রেখে তিনি একা কি করে ফিরে যান? ফিরতে পারলেন না মতি ভাই। দিনে দিনে বাংলাবাজার পত্রিকার স্মৃতি বিস্মৃতি হতে শুরু করলো আমাদের। এরপর সবার নতুন চাপ মতিভাইয়ের ওপর- প্লিজ, আমাদের জন্যে কিছু একটা করুন।
স্বপ্নতার আগেই ছিলো। দেশের প্রথম বেসরকারি নিউজ এজেন্সি নিউজ ব্যুরো’র জন্ম দিয়েছিলেন। একটি অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্নও দেখেছিলেন। স্বপ্ন এখনো আছে একটি স্পোর্টস ডেইলি নিয়ে। কিন্তু মতি ভাইয়ের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে বাংলাবাজার পত্রিকা ছেড়ে আসা এতো সংবাদকর্মীর ভবিষ্যতের জন্যে তার কিছু একটা করা তখন অনিবার্যই হয়ে পড়ে। আর সেটিরই বাস্তবায়ন ঘটে দৈনিক মানবজমিন প্রকাশের মধ্যে দিয়ে।
এ কথা সত্যি সে সময় ট্যাবলয়েড দৈনিক নিয়ে কেবলই যে পাঠকের অনভ্যস্ততা ছিলো, তা কিন্তু নয়। সংবাদকর্মীরাও অনভিজ্ঞ ছিলেন। রক্ষা- তখন আমরা সবেমাত্র ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি। কম্পিউটারের স্ক্রীনে বিদেশি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস রপ্ত করছি। যদিও এখনকার মতো সেগুলোর উপস্থাপনা এতো আধুনিক ছিলো না। কিন্তু মানবজমিন টীমের প্রতিটি সদস্যের চিন্তা-চেতনা আধুনিক ছিলো। তারা ছিলেন দ্রুতগতি সম্পন্ন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলোÑ টীমের প্রতিটি সদস্যের ভেতর নতুন কিছু করার একটা স্পৃহা ছিলো। সে কারণেই সব অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। মানবজমিন কেবল প্রকাশিতই হয়নি। ব্রডশিট দৈনিকগুলোর সঙ্গে সমানতালে টেক্কা দিয়ে নিজের একটা আলাদা অবস্থানও তৈরি করতে পেরেছে। সেটি প্রথম দিনেই বোঝা গিয়েছিলো। ৯৬ পৃষ্ঠার প্রথম সংখ্যা বেরিয়েছিলো ১৯৯৮-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি। ভোরের সূর্য তখন মাঝ আকাশও পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু এজেন্ট আর হকারদের ভিড় তখন মানবজমিনের সার্কুলেশন বিভাগের সামনে। সবারই দাবিÑ আরো পত্রিকা দিন। সকালে যে কপিগুলো দিয়েছিলেন, নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। ধন্যবাদ পাঠক। ইতিহাসতো এভাবেই রচিত হয়। অনিশ্চয়তা দিয়ে যে মানবজমিনের যাত্রা শুরু, সেটিই প্রতি নিয়ত সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে গৌরবের সঙ্গে এক যুগ অতিক্রম করেছে। অভিবাদন মতি ভাইকে। দীর্ঘ এ পথচলায় পাঠকরা কি পেয়েছেনÑ এর হিসাব হয়তো তারাই মেলাবেন বা মেলাচ্ছেন। তবে মানবজমিন দেশের সংবাদপত্র জগতে অসংখ্য সাহসী, পরিশ্রমী, অনুসন্ধিৎসু কলম সৈনিক উপহার দিয়েছে। তারা হয়তো একই ছাতার নিচে নেই। পেশাগত জীবনের বিস্তৃতি ঘটাতে একেকজন একেক স্থানে। কিন্তু তথ্যানুসন্ধান, কর্তব্যপরায়ণতায় আর সবার সঙ্গে তাদের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ভাবতে ভীষণ ভালো লাগছে, দারুণ গর্ব হচ্ছে মানবজমিন’র ইতিহাস গড়া প্রথম টীমের আমিও একজন সদস্য। শুধু তাই নয়, পত্রিকা প্রকাশের আগে থেকে এর নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছি। বিভিন্ন পত্রিকায় মানবজমিনের যতো বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিলো, এর সিংহভাগই তৈরি করেছিলাম আমি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মানবজমিন-এর পক্ষে প্রথম পুরস্কারটিও আমিই ছিনিয়ে এনেছিলাম। আরো অনেক ইতিহাসের সঙ্গেই ছিলাম। সে কারণে মানবজমিন আমার কাছে অন্যরকম এক প্রাপ্তি। এতোদিন পরও স্মৃতিগুলো আমাকে খুব নাড়া দেয়। এখনো আমি ইতিহাস গড়ার সেই মুহূর্তগুলো স্মরণ করি। এর সঙ্গে কাজ করার সেই দিনগুলো নিঃসন্দেহেই প্রেরণার। মানবজমিনে প্রকাশিত রিপোর্ট দিয়ে প্রথম পুরস্কার অর্জনের সেই স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল আমার হৃদয়ে। ঘটনা ছিলো ১৯৯৯ সালের। বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপ কভার করে সবেমাত্র দেশে ফিরেছি। তখনই কোনো একদিন মগবাজারের একটি ক্লিনিক থেকে খবরটি পাই, চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করে যে শিশুটিকে ফেলে দিয়েছিলেন ডাস্টবিনে, সে আর্তচিৎকার করছে বেঁচে থাকার জন্যে। ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটি ওই ক্লিনিকে। সেখানে কোনো ইনকিউবেটর ছিলো না। অসহায় এক পিতা তার অপরিপণত সন্তানকে বাঁচাতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একের পর এক ৭টি হাসপাতালে ছুটে যান। আকুতি জানান। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। চরম অবহেলায় ভোরের সূর্য উঠার আগে নবজাতক মারা যায়। একটি জীবন বাঁচাতে একটি পরিবারের ছুটে চলার প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী ছিলাম আমি। শীর্ষ খবর হিসেবে এটি চাপা হয়েছিল মানবজমিনে। আর এর পর ব্যাপক হৈ চৈ পড়ে যায় চারদিকে। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। শিশু হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে ইনকিউবেটরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। এখন রাজধানীর কম-বেশি সব হাসপাতাল, ক্লিনিকেই ইনকিউবেটর রয়েছে। এ রিপোর্টটির জন্যে আমি পিআইবি-ইউনিসেফ পুরস্কার ২০০০-এর প্রথম পুরস্কার বিজয়ী হই। মানবজমিনের জন্যে আমরা এভাবে সরেজমিন রিপোর্ট করেছি। অন্যের কথা শুনে নয়, নিজে দেখে, অনুসরণ করে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন তথ্যানুসন্ধান করে তবেই লিখেছি। এটাই ছিলো আমাদের দীক্ষা। তবে উল্লেখ করার মতো ঘটনা হলো, যে ক্লিনিক নিয়ে আমি আলোচিত ওই প্রতিবেদনটি লিখেছিলাম. তাদেরই অভিভাবক সংস্থা আমাকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ কভারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। সঙ্গতকারণেই তাদের আফসোস ছিলো খানিকটা। কিন্তু পুরস্কার জেতার পর আবার আমাকে তারাও অভিনন্দন জানিয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, রিপোটিংয়ের সেই আমরা তৈরিই হয়েছিলাম আপোষহীন চরিত্রে। এর কারণ লেখার অবারিত স্বাধীনতা ছিলো। মতি ভাইয়ের স্পষ্ট কথা, ঘটনা সত্যি হলে লিখে দিন। আমি জেলে যেতেও প্রস্তুত । তাই আমাদের লেখার আওতা অনেক বড় ছিলো। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিট থাকলেও রিপোটিংয়ে কারো কোনো সীমাবদ্ধতা ছিলো না।
সেটিই সবাইকে অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে।
১৯৯৯ সালের আরেকটি ঘটনা মনে করলে আমি শিহরিত হই এখনো। সেটি ক্রিকেট বিষয়ক ।
আমি তখন মানবজমিন’র ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক। কিন্তু ইংল্যান্ড
গিয়েছিলাম বিশ্বকাপ কভার করতে। দেড়মাস রিপোর্ট পাঠিয়েছি। যে পত্রিকার
সম্পাদক রিপোর্ট লিখেন, অ্যাসাইনমেন্ট করেন- এর বার্তা সম্পাদকও তা করবেন
না- সেটি কি করে হয়? সংবাদপত্র জগতে আমার অনেক শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, সহযোদ্ধা
অবশ্য এ নিয়ে চরম বিরক্ত। সম্পাদনার টেবিলে বসলে রিপোর্টিং মায়া ছাড়তেই
হবে- এটাই মনে করেন তারা। কিন্ত আমরা তো এর বিপরীত ধারণায় এ অঙ্গনে বড়
হয়েছি। রিপোটিংয়ে না গেলে পরিবেশ, পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ
কখনই হয় না। রিপোর্টারের রক্ত যার ধমনীতে, তাকে যতোভাবেই চেষ্টা করা হোক না
কেনো, থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মতি ভাই পারেননি। তিনি তার অনুসারীদেরও এ
দীক্ষা দিয়েছেন। তাই তার অনুগতদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় রিপোটিং নিয়ে।
সেখানে গ্রুপিং, ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের মূল্য অনেক কম। মানবজমিনের
বার্তা সম্পাদক হওয়ার পরও আমি সেরা রিপোর্টের জন্যে তিনটি পুরস্কার পেয়েছি।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে এখনো ইচ্ছে করে ভীষণ। মতি
ভাই এ ব্যাপারে সবসময়ই আমার বড় প্রেরণা। কিন্তু অন্য বড় ভাইদের অনেকেরই
আপত্তি। আমার এক প্রিয় এক বড় ভাই তো হুঙ্কারই দিয়েই বলেছেন, আবারো যদি
রিপোর্টারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে দেখি, তাহলে বোঝাবো মজা। আমি এখনো
দমে যাই নি। যাই হোক, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দিকে দৃষ্টি ছিলো
দেশের ১৪ কোটি মানুষেরই। প্রথম বিশ্বকাপ বলেই কথা। কিন্তু সে বিশ্বকাপের দল
গঠনেই সমস্যা বাধান নির্বাচকরা। চূড়ান্ত ১৫ জনের দলে ঠাঁই হয় নি দেশসেরা
ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর। আমরা তখন মাঠের পোকা। ক্রিকেটের
নীতিনির্ধারকরদের বার বারই লিখে, নানা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা
করেছি, সিদ্ধান্তটি ঠিক নয়। ক্রিকেট বোর্ডের বড়কর্তাদেও কেউ কেউ নান্নুর
প্রতি নাখোশ ছিলেন। কোনোভাবেই তাদের মন গলছিলো না। কিন্তু প্রবল চাপ ছিলো
তাদের ওপর। তা থেকে বাচঁতে এক পর্যায়ে তারা বলে দেন, ১৫ জনের চূড়াান্ত
তালিকা পৌঁছে গেছে ইংল্যান্ডে। এটিতে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায়
কম-বেশি সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রণে ভঙ্গ দেন। কিন্তু থামেনি মানবজমিন,
থামিনি আমি। নানাভাবেই প্রতিদিনই আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করতে
নানা যুক্তি দেখাচ্ছিলাম। এমনই এক সময় নান্নুর সামনে সুযোগ সৃষ্টি করে
দিলেন অস্ট্রেলিয়ার টম মুডি। তিনিও নান্নুর মতো বাদ পড়েছিলেন। ছিলেন ১৫
জনের বাইরে। অন্তিম মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পান তিনি। আমরাও শুরু
করি নতুন মিশন- টম মুডি সুযোগ পেলে নান্নু পারবেন না কেনো? এবার ক্রিকেট
বোর্ড আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়। এরপরের ঘটনা তো সবাই জানেনই । উইকেট রক্ষক
জাহাঙ্গীরকে বাদ দিয়ে ১৫ জনের দলে সুযোগ পান নান্নু। শুধু তাই নয়,
বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপে তাকেই হিরো বলা হয়ে থাকে। কারণ তার কল্যাণেই
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। মানের দিক দিয়ে
স্কটল্যান্ডের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে। এরপরও আলোচিত ওই খেলায় বাংলাদেশের
সব ব্যাটসম্যান ফ্লপ করেছিলেন। কেবল জ্বলে উঠেছিলো নান্নুর ব্যাট। সুতরাং,
ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনিই। এডিনবরার মাঠে খেলা শেষ করে যখন নান্নু
ফিরছিলেন, তখন ড্রেসিং রুমের সামনে লম্বা লাইন। সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন
তাকে। ভিড় দেখে একটু দূরেই দাঁড়িয়েছিলাম। ড্রেসিং রুমের দিকে পা বাড়াতে
গিয়েও থামেন নান্নু । ভিড় ঠেলে পেছনে আমার এগিয়ে আসেন। বুকে চেপে নেন
আমাকে। বলেন, এই লোকটি আমার বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছিলো। জানি না
নান্নুর জন্যে কি করতে পেরেছিলাম। ব্যক্তি নান্নু আমাদেও মুখ্য কোনো বিষয়
ছিলো না। আমরা বাংলাদেশ দলের শক্তির পরিমাপেই নানা রিপোর্ট করেছি। কিন্তু
এডিনবরায় নান্নুর দেয়া স্বীকৃতি আমার সাংবাদিকতা জীবনের অনেক বড় পাওয়া।
জীবনে আর কখনোই নিজেকে এতোটা সম্মানিত মনে হয় নি। বিশ্বকাপে যে জার্সি গায়ে
নান্নু লড়াই করেছেন, হিরো হয়েছেন তিনি সেটিও উপহার দিয়েছেন আমাকে । আমি
সযতনে রেখে দিয়েছি। এটি একটি দুর্লভ প্রাপ্তি। মানবজমিনে ব্যতিক্রমী কিছু
করার সুযোগ ছিলো বলেই সম্ভব হয়েছিলো আমার এ অর্জন। বিশ্বাস করি এর প্রতিটি
সংবাদকর্মীর জীবনেই আছে কোনো না কোনো প্রাপ্তি। এক যুগের পথ পরিক্রমায় এ
প্রাপ্তির হিসাব করা সত্যিই কষ্টসাধ্য। বন্ধুর গিরি পথেও যে মানবজমিন থেমে
থাকেনি। এর অগ্রযাত্রা ঐতিহ্যের সঙ্গেই অব্যাহত থাকুক।
একটি মিডডে’র স্বপ্ন
- কোন এক বিকালে হঠাৎই এসেছিল ফোনটা। অপরপ্রান্তে দৈনিক ভোরের কাগজের প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরী। যিনি ইন্টারপার্লামেন্টারি ...
স্বপ্নের ই-মেইল, আবেগ এবং...
- সুইডেনের ছোট্ট একটি শহর কালমার। বাল্টিক সাগরের তীরে ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন এ শহর। মানুষ নেই খুব একটা। ...
সাগরময় ঘোষের সেই সাক্ষাৎ
- স্মৃতি রোমন্থনে আছে আলাদা একটা শিহরণ । পেছনের দিনগুলো কি কেবলই দীর্ঘশ্বাসের? না। তা নয়। যতো ...