ইলেকট্রনিক পত্রিকা সব সম্ভব যেখানে
একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের জন্যে কতটা স্থানের প্রয়োজন- এমন প্রশ্নে নিঃসন্দেহেই পাল্টা প্রশ্ন হবে আরেকটি। সেটি হলো, পত্রিকার বাজেট কেমন? লক্ষ্য কি এক নম্বর হওয়া নাকি অন্যকিছু... ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ প্রশ্নের কারণ একটাই- পেছনের উদাহরন। চাকচিক্যপূর্ণ, সাজানো গোছানো, আধুনিক বিশাল অফিস মানেই হলো- এটি বড় বাজেটের প্রকল্প। অর্থ্যাৎ অনেক দুর যাওয়ার সঙ্কেত।
কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে অফিস কি কোন সংবাদপত্রের মান এবং লক্ষ্য নির্ধারণে কোন নিয়ামক শক্তি হতে পারে?
এ প্রশ্নে এখন এক আধটু বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু সময় পাল্টে যাচ্ছে খুবই দ্রুত। কেবল বিশ্বাস আর সততা যদি থাকে, একই সঙ্গে যদি থাকে প্রযুক্তি-তাহলে সংবাদপত্র প্রকাশের জন্যে অফিস কোন মুখ্য বিষয়ই হতে পারে না। ডেস্কটপ থেকে যখন ল্যাপটপের প্রচলণ বাড়ছে, বাড়িতে টেলিভিশন সেটের চেয়ে যখন বেড়ে যাচ্ছে কম্পিউটারের মনিটরের সংখ্যা- তখন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন কতোটা?
হাতে কম্পোজের যুগ থেকে লাইনো হয়ে কম্পিউটার যুগে প্রবেশে খানিকটা সময় লেগেছে বৈকি। কিন্তু ডিজিটাল যুগে পরিবর্তনটা হচ্ছে খুবই খুবই দ্রুত। প্রযুক্তি এখন আলাউদ্দিনের চেরাগের মতোই সামনে। কেবল নেই দৈত্য। তবে সমস্যা সমাধানের তাবৎ বিষয়ই আছে- বলুন কোনটির সমাধান করতে চান। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, ধুয়া কুন্ডলি পাকিয়ে উড়ছে আকাশে। গরম চা টেবিলে। নিউজপ্রিন্টের ওপর কলম চালাচ্ছেন সাংবাদিক।
না। ইন্ট্র্রো টা তো হচ্ছে না। সেই লেখাটিও আসছে না- যেটি চেয়েছি। হাতের মুঠোয় কুচকে যাওয়া নিউজপ্রিন্ট, ছুড়ে ফেলা হচ্ছে বাক্সে। সব ঢিল লক্ষ্যে যেতে পারছে না। দু-একটি ছিটকে পড়েছে মেঝেতে। প্রায় প্রতিটি টেবিলের পাশেই একই দৃশ্য। সন্ধ্যার পর পত্রিকা অফিসে এমন দৃশ্য অনেকটা ছিলো প্রতিদিনের। কিন্তু কি অবাক করা বিষয়, এখন
এমন দৃশ্য কল্পনা করাও দুঃসাধ্য। আইডি কার্ড পাঞ্চ করেই ঢুকতে হয় অফিসে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস কক্ষ। টেবিল থাকছে না। বসতে হচ্ছে কম্পিউটারের সামনে। কাজেই টেবিলের পেছনে বসে সিগারেট ফুকে ধ্যানে বসা কিংবা ম্যুড আনতে দলা বানিয়ে কাগজ ফ্লোরে ফেলে স্তুপ বানানোর সুযোগ আর নেই।
একথা সত্যি, সব সংবাদপত্রের অফিস এখনো বদলে যেতে পারে নি। তবে বদলাচ্ছে। সংবাদকর্মীরা হাতে লেখা ভুলে যাচ্ছেন। কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে কী-বোর্ডের অক্ষরেই তার মনোনিবেশ।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। কুড়ি, পচিশ বছর আগে হাতেই কম্পোজ হতো। একজন সাংবাদিক বা লেখক তার লেখা জমা দিলে, সেটি সম্পাদিত হয়েই যেতো কম্পোজ বিভাগে। সেখানে কম্পোজ হয়ে একাধিকবার প্রুফও দেখা হতো। এরপর ডামি হতো। পাতার মেক-আপেও বিভিন্ন বিভাগের অর্šÍভ’ক্তি। আলোকচিত্র সাংবাদিকদের তোলা ছবি বাছাইয়ের পর পাঠানো হতো ক্যামেরা সেকশনে। সেখান থেকে মাপ অনুযায়ী পজেটিভ শুকিয়ে পাঠানো হতো পেস্টিং টেবিলে। শিল্পকলা বিভাগের অলঙ্করণও যুক্ত হতো। বিভিন্ন বিভাগের কাজগুলো এক সঙ্গে যুক্তহতো পেস্টিং টেবিলে।
বিশ্বাস করা যায়, সংবাদপত্রে সেই পেস্টিং বিভাগই এখন গুরুত্বহীন। অপ্রয়োজনীয়।
কম্পিউটার থেকেই যদি পত্রিকার সাজানো, গোছানো পাতাগুলো সরাসরি প্রেসে চলে যেতে পারে, তাহলে অপ্রয়োজনীয় বিভাগের প্রয়োজন আছে কি? সম্পাদনা সহকারি বিভাগটিও ক্রমে সংবাদপত্রের জন্যে বাহুল্য হয়ে যাচ্ছে। বাংলা বানান শোধরানোর সফটওয়্যারের বহুল প্রচলণ শুরু হলে এ বিভাগটিও হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর যেমনটি হারিয়ে গেছে এনালগ ক্যামেরা সেকশন। পত্রিকা অফিসে ডার্ক রুম এখন কেবলই স্মৃতি। রং, তুলি নিয়ে চিত্রশিল্পীর অংকন চর্চাও অনেকটাই অতীত স্মৃতি। শিল্পীও আকেঁন কম্পিউটারে। মাউস দিয়েই শিল্পী তার তুলি খুঁজেন। পেন্সিলের ব্যবহার করেন। শিল্পীর হাতে রঙ লাগে না। কিন্তু তার আকাঁ ছবি হয়ে উঠে রঙিন।
সংবাদ আহরর্ণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে মাধ্যম টেলিপ্রিন্টার, সেটিও এখন অতীত। কাল যেটি ছিলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আজই সেটিই পুরনো । প্রয়োজনীয়। প্রতিদিনই পুরনো এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই। পুরনো হয়ে যাওয়ার এ গতিতে ছোট হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। হাতের মোবাইল ফোনটি হয়ে উঠছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন ইচ্ছে তখনই যেখানে সেখানে কথা বলার শুধু মাধ্যমই নয় এখন মোবাইল টেলিফোন। এটি দিয়ে বার্তা পাঠানো যায়। পত্রিকা খবরও জানা যায়। তোলা যায় ছবি। পাঠিয়ে দেয়া যায় অন্য যে কাউকে। শোনা যায় রেডিও’র অনুষ্ঠান। উপভোগ করা যায় গান। টেপ করা যায় অন্যের কথা-বার্তা। এমনকি ইন্টারনেটে ব্রাউজ করা যায়। আর ল্যাপটপের কল্যাণে একজন সংবাদকর্মী সব সময় চলমান। কিংবা অন্যভাবে বলা যায়, তার সঙ্গেই চলমান অফিস।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই পরিবর্তন প্রযুক্তির । তবে আশির দশক থেকেই এ দেশের সংবাদপত্রে শিল্পে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে থাকে ব্যাপকভাবে। যদিও সে সময়ে সংবাদকর্মীর দক্ষতা বাড়াতে যতনা প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা হয়েছে এর চেয়ে বেশি হয়েছে পত্রিকার মান বাড়াতে। পত্রিকার মালিকদের প্রথম চিন্তাই ছিলো আধুনিক একটি ছাপা খানা। ৯০-এর দশকের শেষ দিক থেকেই সংবাদকর্মীদেও জন্যে প্রযুক্তি উন্মুক্ত হয়। তারাও বুঝতে শুরু করেন, সময়ের সঙ্গে তাদেরও বদলাতে হবে, অন্তত জানতে হবে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা হচ্ছে- নিত্য নতুন প্রযুক্তির কথা কে কার চেয়ে বেশি জানেন এ নিয়েই।
বেশি দিন আগের কথা নয়। ১৯৯৯ সালের ঘটনা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সেবার বিশ্বকাপ হয় ইংল্যান্ডে। যেহেতু ইতিহাস গড়ার সুযোগ- তাই বাংলাদেশী সাংবাদিকদের একটি বড় দলই গেলো ইংল্যান্ডে। আমিও ছিলাম ওই কাফেলায়। বিশ্বকাপের আয়োজকদের কাছ থেকে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড যখন নিতে গেলাম, তখন উপহার হিসেবে পেলাম বিশাল এক স্যুটকেস(!)। উপহারে রীতিমতো অবাক। বিস্ময়ে এটি খূললাম। ভুল ভাঙলো তখনই। এটি যেন তেন স্যুটকেস নয়। কাপড় চোপড় রাখার কোন ব্যবস্থাও নেই এতে। তাহলে কি- প্রশ্ন নিয়েই অনুসন্ধান।
ভুল ভাঙলো কিছুক্ষণ পরই । এ স্যুটকেসটি ল্যাপটপ রাখার জন্যে। মজার ব্যাপার, আমরা বাংলাদেশী সাংবাদিকরা সুদুর ইংল্যান্ড থেকে এটি বয়ে বাড়ি ফিরেছি। কারণ তখনো আমরা অনেকেই কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের ব্যবহারই জানতাম না। বলাযায়, সবেমাত্র ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে শিখেছি কেউ কেউ। কারো কারো ইমেইল একাউন্ট হয়েছে। অনেকের কাছে তখনো সেটি বিস্ময়ের- ই-মেইল একাউন্ট কি। ইয়াহু ভর করেই আমাদের যতো খোজাঁখুজি। বাংলা কম্পোজ ছিলো অজানা। ভিনদেশী সাংবাদিকরা যখন টেবিলে বস্ইে তাদের লেখা শেষ করে পাঠিয়ে দিতেন, আমরা তখনো সাদা কাগজ খুঁজতে খুঁজতে গলদঘর্ম। গাঢ়ো কালো কালিতে সাদা কাগজে কলম চর্চা ফ্যাক্স পাঠাতে । পয়সা বাচাঁতে যতো টা সম্ভব ঠাসাঠাসি করে লিখেছি।
না। আয়েশ করার সুযোগ ছিলো না। এরপরের ঝক্কি আরো বেশি। ফ্যাক্স পাঠানোর লাইন বরাবরই লম্বা। সেখানে তাড়া সবার। এনালগ পদ্ধতির টেলিযোগাযোগ! একটি ফ্যাক্স পাঠাতে কখনো কখনো ব্যয় দুই তিন ঘন্টা। কখনো বা ব্যর্থ। লাইন পাওয়া যায় নি। আবার অনেক সময় স্বদেশী অন্য সাংবাদিকের ফ্যাক্সের পেছনেই ঢুকিয়ে দিয়েছি নিজের রিপোর্ট। অন্তত লেখাটা তো দেশে পৌছাঁক।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের একদিনের কথা আমার বেশ মনে পড়ে। ইংল্যান্ডের কোন একটি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বসে আড্ডা মারছিলাম। একজন সেচ্ছ্বাসেবক একটি কাগজ বাড়িয়ে দিলেন ব্রিটিশ এক সিনিয়র সাংবাদিকের দিকে- স্যার, এখানে স্বাক্ষর করুন।
ওই ব্রিটিশ সাংবাদিক যেনো খানিকটা বিব্রত হলেন অনুরোধে। কারণ তিনি ল্যাপটপ সাংবাদিক। তার পকেটে কোন কলম ছিলো না। আমরা তো তখন কলমের জোরেই লেখা পাঠাচ্ছিলাম। ভাবলাম সিনিয়র সাংবাদিক। দেই না কলমটা। তার সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করার সুযোগ হবে।
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কলমটা তাকে দিতেই আমার অপ্র¯ত্তত হওয়ার পালা। কলম হাতে নিয়ে ওই ব্রিটিশ সাংবাদিক বলে ফেললেন, ওহ হো, দাও তো... তোমরা তো কলম সাংবাদিক!
ভীষন লজ্জা পেয়েছিলাম সেদিন। তবে এখন অনেক খুশি। কলমবিহীন সাংবাদিকতা করার মিছিলে আছি আমিও। এইতো ২০০৭-এ অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের ঘটনা। ইংল্যান্ড থেকে ওয়েস্টইন্ডিজ- ব্যবধান মাত্র ৮ বছর। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের রণক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিটি সাংবাদিক ল্যাপটপ নিয়ে যান। প্রতিবেশী ভারতের অনেক সাংবাদিক যখন মিডিয়া সেন্টারে বসে সাদা কাগজের ওপর কলম চালিয়েছেন, তখন উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সরব পদচারণা নিঃসন্দেহেই গৌরবের। এ কথা বলাই যায়, বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকরা ফ্যাক্স নামক যন্ত্রটি বোধ হয় ভুলতে শুরু করেছেন। একজন টিভি সাংবাদিক যেমন ক্যামেরায় যাবতীয় কিছু ধারণ এবং সেটি এডিট সর্বোপরি প্যাকেজ করে পাঠিয়ে দেন। তেমনি প্রিন্ট মিডিয়ার একজন সংবাদকর্মীও তার রিপোর্ট ইন্টারনেটে পাঠিয়ে দেন। এমনকি ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি ধারণ করেও পাঠাতে ভুলেন না। কখনো কখনো তিনি তার মোবাইল ফোনটিকে কাজে লাগান। আর যারা অনলাইন বার্তা সংস্থা কিংবা অনলাইন পত্রিকায় কাজ করেন, তারা সেখান থেকেই তাদের রিপোর্ট ও ছবি আপলোড করেন।
সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা বার্তা সংস্থা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন সংবাদপত্রের। এইতো মাত্র ক’দিন আগে কোন এক ছুটির দিনে হঠাৎ আগুন লাগলো দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিং মলে। টেলিভিশনের কল্যাণে বাসায় বসেই টিভি দর্শকরা সরাসরি আগুনের ভয়াবহতা দেখেছেন। টিভির সরাসরি সম্প্রচারের প্রতিযোগিতায় হালে জনসভাও বাসায় বসে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। কাজেই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে কোন কিছুই কি অসাধ্য?
হ্যাঁ, সে কারণেই এখন বলা হয় কোন খবর আর সময়ের ফ্রেমে বন্দি নয়। যখনই ঘটনা, তখনই তা সবাইকে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু। কাগুজে ছাপা পত্রিকা এখনো সময়ের ফ্রেমেই বন্দি। সকালে কিংবা বিকালে প্রকাশিত হবে। এর পাঠকরা সে সময়েই অপেক্ষা করবেন। কিন্তু প্রতিটি সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আপডেট। শুধু কি তাই, কাগজে ছাপানো খবর নড়াচড়া করতে পারেনা। ছবিগুলোও চলমান নয়। কিন্তু অনলাইন সংবাদপত্রে সবই সম্ভব। সংবাদপত্র, টিভি আর বেতারকে বেধেছে এক সুতোয়। কাজেই প্রযুক্তির এ উৎকর্ষতায় গতির নিয়েই পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সে কারণেই ডিজিটাল যুগে অফিস কোন ফ্যাক্টর নয়। শুধু কর্মাশিয়াল বিভাগের জন্যে একটা দপ্তর প্রয়োজন হতে পারে। সেই দিনটি হয়তো বেশি দুরে নয়, যেদিন দেখা যাবে অফিসবিহীন সংবাদপত্র চলছে। সবাই চলমান। ল্যাপটপ নিয়ে যে যার কাজ করছেন। প্রত্যেকের কাছেই থাকবে পাস ওয়ার্ড। সরাসরি পৃষ্ঠায় ঢুকে যে যার কাজটি করে ফেলবেন। নিউজরুমের সর্বোচ্চ পদের ব্যক্তিটি কেবল শেষ পরীক্ষা কওে কী বোর্ডে চাপ দেবেন, আর সেটি চলে যাবে প্রেসে। এরপর প্লেট হবে। শুরু হয়ে যাবে ছাপা। নয় বছর আগেই সুইডেনে একটি সংবাদপত্র অফিসে দেখেছি, প্রেসে কোন লোকই থাকে না। এমনকি সার্কুলেশন বিভাগেও লোক নেই। প্রিন্ট অর্ডার, ডেলিভারি শিডিউল সব কিছুই করা কম্পিউটারে। শুধু কমান্ড দিতেই যতো দেরি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাচ্ছে সব কিছু।
শুধু কম্পিউটার কতভাবেই না এগিয়ে দিয়েছে একজন সংবাদকর্মীকে। একজন সংবাদকর্মী অনায়াসে তার তথ্য ব্যাঙ্ক গড়ে তুলতে পারছেন। ডাটাবেজ-এর সুবিধাও পাচ্ছেন। রেফারেন্সের জন্যে তাকে হন্যে হয়ে লাইব্রেরী থেকে লাইব্রেরী ঘুরতে হচ্ছে না। নিজের জমা রাখা তথ্য তো আছেই, ইন্টারনেটের কৃপায় এগিযে যাওয়া যাচ্ছে আরো। দশ বছর আগেও দেশের পত্রিকার বাইরে ভিনদেশেরও বেশি পত্রিকা পড়ার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু এখন সব কিছু হাতের মুঠোয়। এই তো কিছু দিন আগে একটি আর্ন্তজাতিক ইভেন্ট কভার করতে গিয়ে দেখলাম সিনিয়র সাংবাদিকরা কি দ্রুতগতির সঙ্গেই না তাদের তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন । সংবাদ সম্মেলণে উপস্থিত হয়ে নোট বুকে সব পয়েন্ট টোকা কিংবা মাইক্রোক্যাসেট রেকর্ডারে সব কথা ধারণ করাটা রুটিন কাজ। লেখালেখির বিষয়টা এরপর। কিন্তু এখন? সংবাদ সম্মেলণ যখন শেষ দেখা গেলো রিপোর্ট পাঠানোও শেষ অনেকের!
তবে এই মুহ’র্তে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য, তাহলো উন্নত বিশ্বে এখন আর কাগজে ছাপানো পত্রিকার প্রকাশনা কিংবা প্রচারণা নিয়ে লড়াই হচ্ছে না। কাগজের পাঠক বাড়ানোর প্রতিযোগিতাও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কারণ একটাই- ইলেক্ট্রনিক পত্রিকা। একযোগে, এক সঙ্গে সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে পারেন যে কাগজ, সেটিই তো হবে কাক্সিক্ষত। অনলাইন পত্রিকা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খবর পাওয়ার তৃষ্ণায় এখন আর কেউ ধৈর্য্য ধারণ করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রাজি নয়। পত্রিকার পাঠক সংখ্যার হিসাবে সামনে চলে এসেছে অনলাইন সংস্করণে কোন পত্রিকার কতো হিট। দপ্তর, গোডাউন না থাকলেও যেমন ই-কমার্সেও সুবাদে ব্যবসা করা যায়, দপ্তর না থাকলেও সহজেই একটি ইলেকট্রনিক পত্রিকা প্রকাশ সম্ভব। আধুনিক মানের কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এ ধারাবাহিকতায় নিঃসন্দেহেই বলা যায়, আগামীর ভিত্তিই হবে ইলেকট্রনিক কাগজ। শুধু তথ্য নয়, নির্মল বিনোদন, বিশ্লেষণ, রেফারেন্স- সবই সম্ভব এক জায়গায়। অথচ বড় ধরণের কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। কেবল প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি, চিন্তা এবং দ্রুত গতি। সঙ্গে সঙ্গে ঘুনে ধরা আইনেরও কিছু সংশোধন প্রয়োজন আর্ন্তজাতিক মুদ্রা পাওয়ার জন্যে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রতিযোগিতা তো হবে সারা বিশ্বের সঙ্গেই। অনলাইন সংবাদপত্র ছাড়া আর কোনভাবেই কি এ প্রতিযোগিতায় সামিল হওয়া সম্ভব নয়।
থ্রি ইন ওয়ান
- তার ছবির সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক আগের। তবে তাকে আমি চিনতাম না। সে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ...